শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাঘেরহাট প্রতিনিধি :বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ২৭৬ টি বাঘের কোনো হদিস নেই। কাগজ-কলমের হিসাব এ কথাই বলছে। ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে বন বিভাগ পায়ের ছাপ গুণে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল ৪৪০টি। বর্তমানে বাঘ রয়েছে ১১৪ টি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে সুন্দরবনে নানা কারণে ৫০ টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বাকী ২৭৬ টি বাঘের কোনো খোঁজ মেলেনি। কোথায় গেলো এতো বাঘ?
স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে অনেক বাঘ পার্শ্ববর্তী দেশের সুন্দরবন অংশে চলে গেছে। বনবিভাগ বাঘ মৃত্যুর যে তালিকা দিয়েছে তা সঠিক নয়, বাস্তবে বাঘ মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশী। আবার এমনও হতে পারে, বিগত কয়েকটি জরিপ সঠিক ছিল না।
বনবিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিলো ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ৩৬২টি বাঘ গণনা করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০০৪ সালে বন বিভাগ পায়ের ছাপ গুণে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাড়ায় ১০৬ টিতে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে জানা গেছে বাঘ রয়েছে ১১৪ টি।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকী ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান জানিয়েছেন, আগে পায়ের ছাপের ভিত্তিতে যখন সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল, তখন বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক ছিল: কিন্তু এখন ‘ক্যামেরা সার্ভে’-র মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। এটা নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। সার্ভে অনুযায়ী এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যায় যে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সর্বশেষ জরিপ বলছে সুন্দরবনে আবারও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে কাজ করছে বন বিভাগ।
এদিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাঘিনী ও বাঘের অনুপাত থাকার কথা চারের বিপরীতে এক। কিন্তু এখন তা আছে দশের বিপরীতে এক। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। সেখানে স্ত্রী বাঘের তুলনায় পুরুষ বাঘ খুবই কম। পশ্চিম থেকে পুরুষ বাঘ ধরে পূর্ব বন বিভাগে স্থানান্তরের জন্য একটি আধুনিক প্রযুক্তির লঞ্চ কেনা হবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আইলা থেকে নিয়ে সর্বশেষ আম্ফানে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত, যদি সুন্দরবন না থাকত। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র তুলে আনতে ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি ড্রোন কেনা হবে। সুন্দরবনের প্রতি রেঞ্জে চারটি করে ড্রোন দেওয়া হবে। ড্রোন কেনা হলে খুব কম সময়ে যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করে সে অনুযায়ী ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।