এম এ হান্নান,তজুমদ্দিন প্রতিনিধি :
ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার মুচিবাড়িরকোনা বাজার টু দক্ষিণ খাশেরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫.৪৩ কিলোমিটার রাস্তা ১২ফুট থেকে বর্ধিত করে ১৮ফুট চওড়া করার জন্য রাস্তার দুই পাশে থাকা ব্যক্তি মালিকানা জমির ৮৫৬টি গাছ নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, মুচিবাড়িরকোনা বাজার টু দক্ষিণ খাশেরহাট এর রাস্তাটি ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। জমির মালিকরা রাস্তার পাশে নিজ জমিতে গাছ রোপন করে রক্ষণাবেক্ষণ করে বড় করেছে। ব্যক্তি মালিকানার প্রায় অর্ধশতবর্ষী এমন ৮৫৬টি গাছ অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। নিলামে বিক্রয় হওয়া গাছের পরিমাণ ৮৫৬টি হলেও প্রকৃত পক্ষে গাছ কাটা হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার এর অধিক। গাছখেকো একটি চক্র গণহারে এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গাছের মালিকরা ভয়ে কেউ এই চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছেনা। ২-১জন প্রতিবাদ করলেও তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি দামকি দিয়ে থামিয়ে দিচ্ছে গাছখেকো চক্রের লোকেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাছের একজন মালিক জানান, আমাদের জমিতে লাগানো গাছ আমরা পরিচর্যা করে বড় করেছি। সেসব গাছ ক্ষমতার জোড় দেখিয়ে নিলামে বিক্রি দিয়েছে এলজিইডি। আমার বাড়ির সামনে ০২টি গাছ লাল মার্ক করে নাম্বার দেওয়া ছিলো, বন বিভাগের লোকেরা বলেছে শুধু মাত্র লাল মার্ক করা ২টি গাছ কাটা হবে। কিন্তু এখন লাল মার্কের ২টির সাথে পাশে থাকা আমার আরো ০৩টি গাছ অতিরিক্ত কেটে নেওয়া হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমার বাড়ির ভিতরে থাকা অন্য সব গাছ কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাদের শ্রমে বড় হওয়া গাছ এলজিইডি এবং যেসকল গাছ খেকোরা কেটে নিচ্ছে তাদের বিচার চাই। এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, নিয়ম অনুযায়ী নতুন রাস্তার পাশে এলজিইডি কোন বনায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থানীয় সুবিদাভোগীদের মধ্যেকার চুক্তিপত্র থাকতে হবে। এলজিইডি এর কাছে গাছের মালিকানার স্বপক্ষে এরকম কোন চুক্তিপত্র না থাকলে তারা নিলাম প্রক্রিয়া করতে পারবেনা। তজুমদ্দিনের এই গাছগুলো এলজিইডি কোন প্রক্রিয়ায় নিলাম দিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। আমরা শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল তজুমদ্দিন অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন জানান, মুচিবাড়ির কোনা বাজার টু দক্ষিণ খাশেরহাট রাস্তার দুই পাশে থাকা গাছের মালিকানার স্বপক্ষে এলজিইডি এর কাছে কোন চুক্তিপত্র বা দলিল আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। এ বিষয়টি এলজিইডি এর ভোলা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ভাল বলতে পারবেন। ৮৫৬ এর বাহিরে অতিরিক্ত গাছ কাটার প্রমাণ সরেজমিনে পেয়েছি। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও আমাদের উর্ধ্বতন অফিসে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।এলজিইডি এর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলীল জানান, আমাকে বন বিভাগ মৌখিক ভাবে জানিয়েছে এ গাছের মালিক এলজিইডি। সে অনুযায়ী আমাদের দপ্তর থেকে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা কোন চুক্তিপত্র খুঁজে পাইনি। যদি আমার নিলাম প্রক্রিয়া অবৈধ হয় তাহলে আমি সকল টাকা গাছের প্রকৃত মালিকদের ফেরত দিবো। ৮৫৬ এর বেশি অবৈধ ভাবে অতিরিক্ত যেসব গাছ কাটা হয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত গাছখেকোদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।শম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া জানান, এই গাছগুলো কিভাবে কাটা হচ্ছে আমার জানা নেই। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদকে এ বিষয়ে এলজিইডি অবগত করেনি। গাছগুলো পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ গাছগুলো রক্ষা পেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেতো।