মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শারদীয় দুর্গাপূজা সুুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করা হবে -বললেন ফরিদা খানম, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম : মানব সময় সাহিত্যে প্রকাশিত হলো কেয়া মণি’র লেখা “অভ্যস্ত পাথর” কবিতাটি অপরাজনীতি বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে ছাত্রদল প্রস্তুত রয়েছে – মতবিনিময় সভায় সাইফুল আলম মানব সময় সাহিত্যে প্রকাশিত হলো রীতা জেসমিন এর লেখা “গোধূলি’ তজুমদ্দিনে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন: বেনাপোল যানজট নিরসনে পোর্ট থানার নবাগত ওসি ও সার্জেন্টের ঝটিকা অভিযান রামপুর ওয়ার্ড বিএনপি উদ্যোগে উঠান বৈঠক ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বে -শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম এর অভিযান ও জরিমানা : বেনাপোল পুলিশের অভিযানে আটক- ৫

এক মেয়ের লুকানো কস্টের গল্প – লায়ন নবাব হোসেন মুন্না এমজেএফ

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫.০৪ এএম
  • ৮৭ বার পঠিত

মানব সময় সাহিত্য পাতা :

কাল আমার বিয়ে,এতো রাতে ডায়েরি লিখতে বসলাম।হ্যা কাল আমার বিয়ে, গত চার বছরে প্রেম করার পর কালকে বিয়ের পিরিতে বসতে যাচ্ছি, তবে বর আমার প্রেমিক নয়। বাসা থেকে ঠিক করা বাবার পছন্দের ছেলে। আজকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিলো একটু আগেই শেষ হলো। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে বোধ হয়। শুধু আমারই ঘুম আসছে না। কি করবো বলুন, এতো সহজে কি সবটা ভুলা যায় চার বছর কত ঘন্টা কত মিনিট আর কত সেকেন্ড হয় চার বছরে?
এই পুরোটা সময় ধরে তাকে ভালোবেসে গেছি আমি।আর সে? ভালোবাসা তার আমার প্রতি কেমন ছিলো তা বুঝানোর ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেয়নি।শুধু এতোটুকু জানি মা বাবার পর কেউ যদি আমাকে অনেকটা ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা জাহিদ। এই চার টা বছর একটু একটু করে সম্পর্কটা তৈরি করেছি আমরা। খুব যত্নে আগলে রেখেছি আমাদের ভালোবাসা টাকে।কতো স্বপ্ন ছিলো দুচোখ ভরা।
কিন্তু সমস্যা টা কোথায় জানেন? পরিবারের কেউ কোনো ভাবেই মেনে নিল না, জাহিদ কে ওর পরিবার থেকে বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছিলো। বেকার ছিলো ও, তবুও বাসায় ওর কথা বললাম। ও আমার পরিবারের
সাথে কথা বলেছে, অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে, আমিও করেছি সাধ্যমতো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
ভালোবাসার টানে ঘর ছাড়তে চাইলাম, কিন্তু জাহিদ রাজি হলোনা, সবার মনে কষ্ট দিয়ে সুখী হতে পারবো না আমরা, বাবা মা সম্মান রক্ষা করতে না পারলে কেমন সন্তান আমরা?এই ভাবে সবার থেকে পালিয়ে গিয়ে আমাদের ভালোবাসা স্বীকৃতি পেলেও আমাদের প্রতি আমাদের বাবা মায়ের যে ভালোবাসা আছে তার যে বড্ড বেশি অপমান হয়ে যাবে। এই রকম কতো কিছু বুঝালো আমাকে জাহিদ। আমার সেই পাগলাটে কখন এতোটা বড় হয়ে গেছে এতোটা বুঝতে শিখে গেছে টেরই পেলাম না আমি। হয়তো সময়ই সব শিখিয়ে দেয় মানুষকে,সময়ই সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শেষ যেদিন দেখা হলো আমাদের,কেউ কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। ওর চোখ গুলো খুব লাল ছিলো, এলেমেলো চুল।পুরোটা সময় ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম দুজনেই। দুজনই যেনো ভাষাশূন্য হয়ে পরেছিলাম। এইতো কদিন আগেও কথা যেনো শেষই হতো না আমাদের।আর সেদিন শেষ বারের মতো কথা বলতে গিয়েও আমরা কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম ভালো থেকো, জাহিদ মাথা নাড়লো শুধু। কাল আমার বিয়ে, একবুক শূন্যতা নিয়ে যাচ্ছি আরেক জনের ঘর পূর্ন করতে, কি অদ্ভুত তাই না? আজ ১৩ নভেম্বর ২০১৭ আজ আমার ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে থেকে রুপা (আমার মেয়ে)কে নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। স্টেশনে বসে রুপা কে বললাম পানি নিয়ে আসতে। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে বললো, নীলা কেমন আছো?গলাটা শুনে চিনতে ভুল হলো না। পিছনে ঘুরে দীর্ঘ ১৬ বছর পর তাকালাম,
জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। সুট্য পড়া টাক মাথায় কাচাপাকা চুল হালকা দাড়ি,চোখে পাওয়ারফুল চশমা। কিন্তু চোখ গুলো সেই আগের মতোই আছে, তাকানোর ধরণটাও সেই আগের মতোই আছে। বুক ভেংগে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো, বললাম ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? অনেকদিন পর দেখা তাই না? ও হাসলো। তারপর পাশে এসে বসলো। বললো ভালোই আছি, বুড়ো হয়ে গেছো দেখছি।আমি হৃদয়ের কম্পন নিয়ে হাসলাম। জাহিদ কে জিজ্ঞেস করলাম বিয়ে করেছো?ও হাসলো,কিছু বললো হ্যা না কিছু বললো না। কতো কথা বলার ছিলো, কতো দিন পর দেখা, তবু যেন বলার কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। জিজ্ঞেস করলাম, খুব কষ্ট হয়ে ছিলো বুঝি নিজেকে সামলাতে?ও বললো, তুমি তো আমার চেয়ে বেশি কষ্টে ছিলে, আমি তো তবু নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারতাম, আর তোমাকে তো শ্বশুর বাড়িতে সব চেপে হাসি মুখে সব কিছু সামলাতে হতো, তাই না?আমি বললাম,আমাকে মনে পরতো তোমার? জাহিদ একটু হেসে বললো থাক না এই গুলো এখন। আচ্ছা নীলা, এই সময় টা পারতো না অন্যরকম হতে?আমি বললাম, পারতো, কিন্তু ভাগ্যে যে এটাই ছিলো। জাহিদ বললো, আকাশী শাড়ীতে তোমাকে এখনো আগের মতোই সুন্দর লাগে। আমি হাসলাম। রুপা চলে আসলো পানি নিয়ে,জাহিদকে বললাম আমার মেয়ে, জাহিদ রুপা কে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কি মা? আমার নাম রুপা জাহিদ আমার দিকে ফিরে তাকালো৷ ওর ঠোঁট কাঁপছিলো। জানি ওর অনেক পুরানো স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে এখন। ও ঠিক করে রেখেছিলো আমাদের বিয়ের পর মেয়ে সন্তান হলে ওর নাম রাখবে রুপা। রুপা বললো মা ট্রেন এসে পরেছে চলো,রুপাকে এগুতে বললাম। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আসি তাহলে?ও বললো, এখনো ভালোবাসো আমাকে ?আমি বললাম,তা জানিনা, কিন্তু আমাদের ভালোবাসার অসম্মান হবে বলে এখনো সুন্দর ভাবে সংসার করে যাচ্ছি,তুমি একদিন বলেছিলে বিয়ের পর আমি উল্টো পাল্টা যেন কিছু না করি,
করলে আমার পরিবার তোমাকে দোষ দিবে, ওরা বলবে তোমার জন্যেই আমি সব করছি। সেই ভয়ে আজ পর্যন্ত এমন কিছু করিনি যাতে কেউ তোমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে। বলতে বলতে আমার চোখ অশ্রুপাত হতে শুরু করেছে,আর চোখের সামনে ভাসচ্ছেন ঝাপসা অতীত সোনালি স্মৃতি। ও বললো এটাই কি শেষ দেখা? আমি বললাম নাহ দেখা যখন হলো,আবার হয়তো হবে কোন দিন, হারিয়ে যাওয়ার জন্যে পৃথিবীটা অনেক ছোট। জাহিদ বললো, শান্তনা একটাই যে ভুল মানুষকে ভালোবাসিনি। সব কিছুই ঠিক ছিলো, শুধু পরিস্থিতি টা ঠিক ছিলো না। আমি বললাম, ভালো থেকে তুমি। ১৬ বছর আগের মতো ও শুধু মাথা নাড়ালো। আর বললো মেয়েকে কোন দিন আমার পরিচয় দিবে না আমি তোমার কে ছিলাম আমি ট্রেনে গিয়ে উঠলাম।ট্রেন চলতে শুরু করলো, আসতে আসতে দূরত্ব বাড়তে লাগলো। জাহিদ হাস্যজ্বল মুখে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখলাম রুমাল দিয়ে,হয়তো ট্রেনের চলতে শুরু করেছে বলে ধুলো ওর চোখে চলে গেছে, আবার হয়তো বা অন্য কিছু। সব কিছু জানতে নেই। সব কিছু কি ১৬ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে? না হয়নি, এখনো কোনো মধ্যে রাতে কিংবা বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি মুখর সন্ধাবেলায় এই ভালোবাসার মানুষ গুলোর চোখের কেন ভিজে উঠে, তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে বুকের বাম দিকটা ভালোবাসা কখনো শেষ হয়ে যায় না, সময় ও পরিস্থিতির কাছে হার মেনে সময়ের স্রোতে অনেক ভালোবাসাই হারিয়ে যায়। কিন্তু কোথাও না কোথাও একটু খানি থেকেই যায় অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2021 manobsomoy
Theme Developed BY ThemesBazar.Com