বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দঃ হালিশহর ফুটবল একাডেমির উপ- কমিটি গঠন: চেয়ারম্যান রাসেল, টিম ম্যানেজার বাবলা মেয়র ডা. শাহাদাতের অর্জন: বন্দর থেকে ১০০ কোটি টাকা পেল চসিক বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ফ্রিডম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং নির্ণয় কর্মসূচি শুধু শেখ হাসিনা নহে সব লীগেই লুটপাটের সাথে জড়িত: ইপিজেডে থানা ৩৯ প্রশাসনিক ওয়ার্ড এর ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে শাহজাহান চৌধুরী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩৯ নং ওয়ার্ড ইপিজেড থানার আয়োজনে ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে গণসংযোগ পক্ষ শুরুর ঘোষণা : বাগেরহাট জেলা ফোরাম- চট্টগ্রাম’র আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন বৃটেনের কার্ডিফে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা, ফিলিস্তিনে ইসরালি গণহত্যার প্রতিবাদ দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোখতার আহম্মেদ এর শেষ কর্ম দিবস উপলক্ষে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান: জেলা প্রশাসক জনাব ফরিদা খানম কোরিয়ান ইপিজেড (KEPZ) কর্তৃপক্ষের নিকট ২৪৮৩ (দুই হাজার চারশত তিরাশি) একর জমির দলিল হস্তান্ত করেন: রহমান আদর্শ শিক্ষালয়’র এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান

পেশার দ্বন্দ্ব

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ৬.৪৪ এএম
  • ৭০০ বার পঠিত
ফাইল ছবি

পেশা নিয়ে সম্মান-অসম্মানের ধারণা সমাজে বহুযুগ থেকে চর্চিত। শিশুকালেই আমাদের বলা হয়ে থাকে যেভাবেই হোক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার, ব্যাংকার, মিলিটারি কিংবা পুলিশ অফিসারের মতো সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হতে হবে। অর্থাৎ অন্য পেশাগুলো যে অসম্মানের সুস্পষ্টভাবে সেই ধারণাই দেন অভিভাবকরা।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন বিভেদ, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও শ্রেণি বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ পেশা বিষয়ক প্রচলিত এই ধারণা। এর ফলে বড় হয়ে কেউ নিজেকে সম্মানজনক পেশার লোক ভেবে অহংকারী হয়। আর কেউবা নিজের পেশাকে অসম্মানজনক ভেবে হীনম্মন্যতায় ভোগে। অহংকারীরা কারণ-অকারণে অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করেন আর হীনম্মন্যতার শিকার মানুষগুলো সারাজীবন জড়ো পদার্থের মতো বাঁচেন। যেমন চিকিৎসায় অবহেলার কথা আসলেই কিছু ডাক্তার নাখোশ হন। মানবিক চিন্তা বিসর্জন দিয়ে কর্মবিরতি ডেকে বসেন। রোগীকে জিম্মি করে দাবিও আদায় করেন।

‘আপনি একজন কাস্টমস অফিসার বা যে কোন অফিসের একজন অফিসার। আপনি দু’হাতে ঘুষ খান। মানুষ কি আপনাকে সম্মান করবে? ডাকাতের সামনে কেউ যদি হাতজোড় করে দাঁড়ায়, কেউ কি বলবে যে-সে ডাকাতকে সম্মান করছে?’

সংবাদকর্মী হিসেবে এসব ঘটনা পাঠকের কাছে তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। আমি চেষ্টা করি শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ণনা করতে। এক্ষেত্রে রোগী বা তার স্বজনদের ভুল-ত্রুটিও আড়ালে থাকে না। কিন্তু রিপোর্ট ছাপা হলেই আমাকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। কেস না বুঝে রিপোর্ট করার অভিযোগও করেন। দম্ভ নিয়ে অনেক ডাক্তারকেই তখন বলতে শুনি আরে তিনি তো বকলম সাংবাদিক। বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে পিছে লেগেছে। পেশা নিয়ে অহংবোধে শিক্ষকরাও কম যান না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, দলাদলি, গবেষণা কর্মে কাট-কপি, মারামারি-হাতাহাতিসহ নানাবিধ অনিয়ম-অনাচারের কথা বললে তাদের অনেকে একরকম তেড়ে আসেন।

সাংবাদিকতার এথিক্স নিয়ে নতুন করে পাঠ দেন। এসব নিউজ করার কী আছে এমন দাবিও করেন। মনে মনে যে গালমন্দ করেন তা আর বলার অবকাশ রাখে না। বিশেষ বিশেষ পেশার মানুষ তো আরো একধাপ এগিয়ে। অনিয়মের কথা আসলে প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্পে তারা দাঁতের মাড়ি শক্ত করে রাখেন। সুযোগ বুঝে পেটে লাথি মারতেও কুণ্ঠিত হন না। বড় হাতের ইশারায় চুটকিতে এই নগণ্য কাজ সেরে ফেলেন। পরে আলোআঁধারে চিয়ার্স ধ্বনিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বাতাসে মিলিয়ে দেন।

সাংবাদিকরা যে ধোয়া তুলসি পাতা এমনটা দাবি করছি না। মাটিতে পা পড়ে না এমন জার্নালিস্টের সংখ্যা নেহাতি কম না। তেলবাজিতে বিশেষ দক্ষতায় অনেকে যে আঙ্গুল ফুলে বট গাছ (কলা গাছে পোসায় না) বনে গেছেন তার প্রমাণ ঢের। তবে এটাও সত্যি যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জবাবদিহিতার জায়গায় গণমাধ্যম বা সংবাদকর্মীর যে ভূমিকা তা অন্য যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা ব্যক্তির তুলনায় অগ্রগণ্য। আপনি ভাবতেই পারেন সুযোগ পেয়ে নিজ পেশার গুণকীর্তন করছি। আমি সেটা অস্বীকারও করতে চাই না। তবে আমার দাবি একটু ভেবে দেখার আহ্বান জানাতে চাই। সমাজে একই পেশার মানুষের মাঝে আবার কতো বৈষম্য বিদ্যমান। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে আমরা যে নজরে দেখি স্কুল শিক্ষককে সেভাবে মূল্যায়ন করি না। কিংবা মূল ধারার সাংবাদিকে আমারা যতটা গুরুত্ব দিই মফস্বলের সাংবাদিকে পাত্তাই দিই না। অথচ কমবেশি সাবাই জানি জেলার সংবাদদাতারাই গণমাধ্যমের প্রাণ। এক্ষেত্রে যার বৈভব যত বেশি তার সাফল্য তত ঈর্ষণীয়।

স্কুল শিক্ষকদের বেলাতেও তাই। যতদিন আপনি প্রাইমারি মাস্টারদের যথাযথ মর্যাদা-মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হবেন ততদিন আপনি উন্নত জাতির তকমাও পাবেন না। সহজ শর্তে উন্নত রাষ্ট্রের কাছ থেকে বড় ঋণ হবে আপনার টিকে থাকার অবলম্বন। কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা লেখা নজরে আসে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে সংগৃহীত উল্লেখ করে লেখাটা আপ করা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘সম্মানজনক পেশা’ বলেতে কি কিছু আছে? উত্তরে লেখক বলছেন আসলে পেশার কারণে কেউ সম্মানিত বা অসম্মানিত হতে পারে না। সম্মান আসে জ্ঞান, চরিত্র আর সততায়।

আপনি একজন কাস্টমস অফিসার বা যে কোন অফিসের একজন অফিসার। আপনি দু’হাতে ঘুষ খান। মানুষ কি আপনাকে সম্মান করবে? ডাকাতের সামনে কেউ যদি হাতজোড় করে দাঁড়ায়, কেউ কি বলবে যে-সে ডাকাতকে সম্মান করছে? আপনি একজন শিক্ষক। কিন্তু আপনার জ্ঞান জোড়াতালি মার্কা, আপনি ভালো পড়াতে পারেন না, কিংবা পড়ান না-ছাত্ররা আপনাকে সম্মান করবে? করবে না। পরীক্ষায় ফেলের ভয়ে বড়জোর তারা আপনাকে তোয়াজ করবে। অর্থাৎ অর্থকারী পেশা মানেই সম্মানজনক পেশা নয়। পেশা হলো জীবনধারণের প্রয়োজনে ব্যয় নির্বাহের উপায় মাত্র। মানবিক দিক থেকে দুনিয়ার সব মানুষের মর্যাদা সমান।

ধরেন একজন দলিত, তো তাঁর পেশাকে কি আপনি খুব অসম্মানজনক মনে করেন? যদি করেন, কেন? আপনার কি টয়লেট-বাথরুম পরিষ্কার করতে হয় না? কিংবা আপনি কি নিজেকে পরিষ্কার করেন না। তখন কি আপনি অসম্মানিত হয়ে পড়েন? কাউকে না ঠকিয়ে, বৈধভাবে অর্জিত যেকোন জীবিকাই সম্মানের। এখানে ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করতে চাই। তখন আমি অন্য এক টিভিতে শ্রম দিই। একদিন কথায় কথায় সিনিয়র এক সাংবাদিক আমাকে বলেন শোন কর্মই হচ্ছে ধর্ম। অর্থাৎ আমরা যদি যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করি তাহলে সেটাই প্রার্থনা।

যেমন বাবা-মাকে দেখভাল করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। কেউ যদি সেটা পালন করে তাহলে সে স্রষ্টার সন্তুষ্টিও অর্জন করে। এই পথে নিজের উন্নতি-প্রশান্তির পাশাপাশি দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি অনিবার্য। আসলে সমাজে সবাই সবার ওপর নির্ভরশীল। কাউকে ছাড়া কারো চলে না। তাই কারো সাথে অন্যায়-অনিয়ম করার আগে একবার নয় শতবার ভাবুন। কেননা আপনি যদি কাউকে ইট মারেন তবে পাটকেলের আঘাত অবধারিত। অবশ্য তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে না গেলে এসব কথায় চিড়ে ভিজবে না। কবির ভাষায়-এসব মন্ত্রে জাগে না হৃদয় লাগে যেন পরিহাস।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2021 manobsomoy
Theme Developed BY ThemesBazar.Com