মানব সময় ডেস্ক :
প্রেমের মায়াজালে ফেলে প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীর ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল এবং পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে অসংখ্য ভিকটিমের নিকট হতে তাদের সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়া সাইবার প্রতারক ও ভন্ড প্রেমিক ‘মোঃ জহির (৩২) এবং তার সহযোগী মোঃ সারোয়ার (২৪)’কে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
১। বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। ভুক্তভোগী ভিকটিম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এলাকায় বসবাস করতেন এবং পেকুয়া উপজেলায় একটি এনজিওতে চাকুরী করতেন। আসামী মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সাথে ভিকটিমের ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত¦পূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। জহিরুল ভিকটিমের কাছে নিজেকে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয় নিজেকে অবিবাহিত বলে জানায়। সে আরো জানায় সে শীগ্রই বিবাহ করবে এবং তার আতœীয়-স্বজন তার জন্য পাত্রী দেখছে। এভাবে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের সৃষ্টি হলে আসামী জহিরুল ভিকটিমের কাছে তার ছবি চায়। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে জহিরুলের ব্যবহৃত মোবাইলে তার ছবি দেয়। পরবর্তীতে আসামী জহিরুল ভিকটিমকে জানায় তাকে তার ও তার পরিবারের পছন্দ হয়েছে এবং সে তাকে বিবাহ করবে। জহিরুলের পরিবার তার পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়।
৩। পরবর্তীতে আসামী জহিরুলের অনুরোধে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিঃ তারিখে পেকুয়া চৌমুহনী এলাকায় জহিরুলের সাথে ভিকটিম দেখা করে। কথা বলার একপর্যায়ে জহিরুল ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে তার মোবাইলের গ্যালারি হতে ব্যাক্তিগত কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র তার মোবাইলে নিয়ে নেয়। ঐদিন রাত আনুমানিক ২১৫০ ঘটিকায় জহিরুলের সাথে ভিকটিমের ভিডিওকলে কথা হয়। পরবর্তীতে আসামী জহিরুল তার মোবাইলে ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে এবং ভিকটিমকে তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও চিত্র প্রেরণ করতে চাপ দেয় এবং না দিলে তার নিকট রক্ষিত ছবিগুলো সে তার এলাকার লোকজন সহ অফিসের বস, কলিগ ও আতœীয়-স্বজনকে দেখাবে বলে বিভিন্ন রকমের ভয়-ভীতি দেখায়। ভিকটিম ভয়ে আসামীর হোয়াট্সএ্যাপ ও ইমোতে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের কিছু ছবি প্রেরণ করে। পরবর্তীতে আসামী ভিকটিমকে তার সাথে হোটেলে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে প্রস্তাব দেয় এবং তাতে রাজী না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকী দেয়। ভিকটিম আসামীর কু প্রস্তাবে রাজী না হলে আসামী জহির তার কাছে ৫০,০০০/- টাকা দাবী করে। ভিকটিমের টাকা দিতে দেরী হওয়ায় আসামী জহির তার মোবাইল থেকে তার সহযোগী আসামী সরোয়ার এর মোবাইল সহ বিভিন্ন যায়গায় ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র পাঠায়।
৪। গত ০২ মার্চ ২০২৩ খ্রিঃ তারিখে আসামী সরোয়ার ভিকটিমকে ফোন করে বলে তার কাছে ভিকটিমের কিছু ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি আছে এবং তাকে ৫০,০০০/- টাকা না দিলে ঐ ছবি এবং ভিডিও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। পরবর্তীতে গত ০৯ মার্চ ২০২৩ খ্রিঃ আসামী জহিরুল ভিকটিমের চাচাতো ভাই এর নিকট ভিকটিমের স্থিরচিত্র সমূহ প্রেরণ করে। ভিকটিম তার চাচাতো ভাইকে এই ঘটনা খুলে বলেন। পরবর্তীতে ভিকটিম উপরোক্ত ঘটনার সুবিচার পাওয়ার জন্য র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
৫। ভিকটিমের এরুপ অভিযোগের বিষয়টি র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সহিত আমলে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অদ্য ১৬ মার্চ ২০২৩ইং তারিখ ১৩৪৫ ঘটিকায় কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানাধীন চৌমুহনী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ জহির উদ্দিন (৩২) পিতা-আমিনুল হক সাং-রাজাখালী, থানা-পেকুয়া, জেলা-কক্সবাজার এবং ২। মোঃ সরোয়ার (২৪) পিতা-মোঃ সওকত, সাং-মিয়ারপাড়া, থানা-পেকুয়া, জেলা-কক্সবাজার’দ্বয়কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা ভিকটিমকে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় ভীতি প্রদর্শনের কথা স¦ীকার করে।
৬। ভিকটিমের ভাষ্যমতে আসামী জহির ভিকটিমের অন্য একজন নারী সহকর্মীর সাথেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ২০,০০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। পরবর্তীতে উক্ত ভিকটিম সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্ঠাও করেছিল।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা পরস্পর যোগসাজসে প্রেমের মায়াজালে ফেলে প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীর ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল করত এবং পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে তাদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিত। গ্রেফতারকৃত আসামীদের ব্যক্তিগত মোবাইল তল্লাশী করে অসংখ্য ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র পাওয়া যায় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অসংখ্য মেয়ের সাথে এরুপ অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের থেকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের কথা স¦ীকার করে।
৮। গ্রেফতারকৃত আসামীর সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।