বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
তজুমদ্দিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সদের পদায়নের এক দফা দাবিতে চার ঘণ্টার কর্মবিরতি শারদীয় দুর্গাপূজা সুুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করা হবে -বললেন ফরিদা খানম, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম : মানব সময় সাহিত্যে প্রকাশিত হলো কেয়া মণি’র লেখা “অভ্যস্ত পাথর” কবিতাটি অপরাজনীতি বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে ছাত্রদল প্রস্তুত রয়েছে – মতবিনিময় সভায় সাইফুল আলম মানব সময় সাহিত্যে প্রকাশিত হলো রীতা জেসমিন এর লেখা “গোধূলি’ তজুমদ্দিনে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন: বেনাপোল যানজট নিরসনে পোর্ট থানার নবাগত ওসি ও সার্জেন্টের ঝটিকা অভিযান রামপুর ওয়ার্ড বিএনপি উদ্যোগে উঠান বৈঠক ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বে -শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম এর অভিযান ও জরিমানা :

মানব সময় সাহিত্যে প্রকাশিত হলো রেশমা আক্তার এর ধরাবাহিক উপন্যাস ” একজন আরাধ্যার জন্ম”

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২.৫৭ পিএম
  • ৩৮৭ বার পঠিত

ধরাবাহিক উপন্যাস
” একজন আরাধ্যার জন্ম”
(পর্ব-১)
রেশমা আক্তার

হাইওয়েতে শা শা করে ঘন্টা দুয়েক ছুটে শহরের কাছাকাছি এসে মন্থর হলো অরুদের গাড়িটা। বিভাগীয় শহরের বাইরে, একটা নিরিবিলি জায়গায়, গতকাল অরু তার বন্ধু তোহার আয়োজিত এক জমকালো বার্থডে পার্টিতে এটেন্ড করতে গিয়েছিলো। জায়গাটা একটা খামারবাড়ির মতো। তোহার বাবার শখের বানানো বাংলো। সারারাত তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ উৎসব শেষে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তারা। অতিথিদের রাতে থাকার ব্যবস্থা ছিলো, এমনকি আজকেও সারাদিনব্যাপী তাদের নানান আয়োজন, পরিকল্পনা। কিন্তু সকাল ন’টা নাগাদ অরুদের ড্রাইভার মমিন, গিয়ে উপস্থিত। কে কখন ফিরবে জানেনা অরু, তবে তাকে যে তখনই ফিরতে হবে সেটা জানতো সে।

অরু স্বনামধন্য ব্যারিষ্টার তানভীর চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। সে এ লেভেল শেষ করেছে।
বিদেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে তার। দু’এক মাসের মধ্যেই চলে যাবে সে, গোছগাছ চলছে। দেশ ছেড়ে যাবার আগে বন্ধুদের সাথে একটা রাত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলো অরু তার বাবার কাছে। শুধুমাত্র এ কারণেই এই বার্থডে পার্টিতে যাবার অনুমতি মিলেছিলো তার। তাও গতকাল সন্ধ্যা থেকে মেয়েকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা ফোন দেয়া হয়ে গেছে তানভীর চৌধুরীর। অরু জানে, গতকাল তার বাবা মা নির্ঘাত তার চিন্তায় নির্ঘুম রাত্রিযাপন করেছে।

ড্রাইভার মমিন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো বাইরে। অরু, তোহা আর তার পরিবারের কাছ থেকে যখন বিদায় নিচ্ছিলো, বেশীরভাগ বন্ধুরা তখনও ঘুমিয়ে। গাড়িতে ওঠার সময় দেখলো, সারা আর জিমি, তার গাড়িতে লিফট নেয়ার জন্য তার আগেই তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অরু ভাবলো, এ ভালোই হলো, এতটা পথ একা একা যেতে হবে না তাকে।
ওয়েস্টার্ন পোশাকে, তাদের তিনজনের পিঠেই ব্যাগ। মমিন ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির ডিকিতে রাখছিলো। অরুর ইচ্ছে ছিলো সামনে বসবে, কিন্তু দুই বন্ধুকে পেছনে রেখে সেটা করতে পারলো না সে। অগত্যা তিনজনই পেছনে বসলো।

গাড়িতে উঠে পেছনের সিটে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লো তারা । অরু মাঝখানে, দু’পাশের দু’জন ঢুলতে ঢুলতে একসময় অরুর কাঁধেই মাথা হেলিয়ে ঢলে পড়লো। ঘন্টা দুই পর তারা শহরের কাছাকাছি চলে এলো। পথঘাট এখনও ফাঁকা, লোকজন কম। হঠাৎ ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়িটা তীব্র ব্রেক করে থেমে গেলো। তিনজনই চোখ খুলে ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে উঠলো
– কী হয়েছে… কী হয়েছে আঙ্কেল?

মধ্যবয়সী ড্রাইভার মমিনের গলায় খানিকটা বিরক্তি। সে এখন তাকিয়ে আছে সামনে, রাস্তায়। একটা জুবুথুবু পাগলীর পিছু নিয়েছিলো চার পাঁচটা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। কেউ ঢিল মেরে, কেউ লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে উত্তক্ত করছিলো তাকে। পাগলী তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতেই হয়তো রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলো। কিন্তু পথের মাঝখানে ঢালু জায়গায় জমা হওয়া পানিতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো সে। গাড়ি ব্রেক না করলে দুর্ঘটনা ঘটতো নির্ঘাত। মমিন সহ সামনের দিকে উঁকি দিয়ে দেখছিলো তারা সবাই। কাঁদা মাখামাখি হয়ে পাগলী আর সহজে উঠতে পারছিলো না তখন।

এমন সময় গাড়ির পেছনের দরজা খুলে গেলো। ড্রাইভার তটস্থ হলো, বলল
– আপনারা নামলেন কেন? ভেতরে গিয়া বসেন, আমি দেখতেছি।
ড্রাইভারের কথা শুনলো না অরু। তার হাতে ছোট্ট একটা পানির বোতল। ড্রাইভার নামার আগেই সে এগিয়ে গেলো সামনে।
সাথে সারা আর জিমিও।

মমিন, অরুদের পুরোনো ড্রাইভার। গাড়ি থেকে নামতে নামতে সে মহা বিরক্ত। আজকালকার ছেলেমেয়েগুলোর সবকিছুতে অতিরিক্ত কৌতূহল। আরে গাড়ির সামনে একটা পাগল এসে পড়েছে, এটা তোদের দেখার কী আছে? তোরা বসে ছিলি, বসে থাক।
মমিন একটা লাঠি দিয়ে তাড়া দিলেই পাগলী বাপ বাপ করে পালাবে।

ততক্ষণে অরু গিয়ে পাগলীটার হাত দুয়েক দূরে থমকে দাঁড়িয়েছে। পাগলীটা নিজের লম্বা, ঢোলা কাপড়চোপড় নিয়ে জুবুথুবু, সে বসে আছে অন্যদিকে মুখ করে । সম্ভবত সে তার পায়ে খুব ব্যাথা পেয়েছে। নিচু হয়ে নিজের পায়ে হাত বোলাচ্ছিলো আর ক্ষীণ স্বরে কাতরাচ্ছিলো।

মমিনের হাতের লাঠির তাড়া খেয়ে ইতিমধ্যে ছেলেমেয়েগুলো একটু দূরে সরে গিয়েছে।

অরু এবার একটু ঝুঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– এক্সকিউজ মি, আর ইউ হার্ট সামহয়্যার?

পেছন থেকে মমিন বলল
– আম্মাজী, পাগলে ইংরেজি বুজবে না, বাংলায় বলেন…
সারা আর জিমি হি হি হি করে হাসছে। অরু নিজের ভুল বুঝতে পেরে গম্ভীর হলো। সে আরেকটু ঝুঁকে পানির বোতলটা এগিয়ে ধরলো…
– এই যে, আপনি কী একটু পানি খাবেন…?

মমিন চরম বিরক্ত। তার ধারণা বড়লোকের বাচ্চাকাচ্চাগুলা চূড়ান্ত নির্বোধ প্রকৃতির। এদের কিছু বুঝিয়েও লাভ নেই। রাস্তার একটা পাগলকে ব্যারিষ্টার সাহেবের এ লেভেল পড়া মেয়ে জিজ্ঞাসা করছে “এক্সকিউজ মি, আপনি একটু পানি খাবেন?” এই হইলো ইংরেজি শিক্ষার ফলাফল। আর কী দেখার বাকি আছে মমিনের এই জীবনে?

অরুর ডাকে সামান্য মাথা ঘোরালো পাগলী। কিন্তু তার মুখ দেখা গেলো না। মাথাভর্তি তামাটে কোকড়ানো চুলের গোছা এসে পড়েছে তার মুখের ওপর। তবে এবার তার হলদেটে গায়ের রঙের কিছুটা আভাস পাওয়া গেলো।

কৌতূহলী সারা আর জিমি অরুর ঠিক পেছনেই উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে। তাদের পেছনে মমিনও এবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো।
অরু জিজ্ঞেস করলো
– আপনি কী একা উঠতে পারবেন?
পাগলীর এ কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না। অরু জানতে চাইলো
– ডু ইউ নিড হেল্প?
পেছনে আবারও খিলখিল হাসি। মমিন মহা বিরক্ত। সে বলল
– অনেক হইছে। আম্মাজীরা, এবার আপনারা গাড়িতে গিয়া বসেন। আমি লাঠি দেখাইলে সে লাফ দিয়া উইঠা দাঁড়াবে। শুধু দাঁড়াবে না, দৌড়ে কূল পাবে না। এইবার দেখন লাঠির তেলেছমাতি…

পাগলীটা এবার পুরোপুরি মুখ ঘোরালো। তার মুখের ওপর থেকে অবিন্যস্ত চুলগুলোও সরে গেলো। ফর্সা গায়ের রঙটা দীর্ঘদিন রোদে পুড়ে যেন জায়গায় জায়গায় বাদামী ছোপ ছোপ পড়েছে। চিকন জোড়া ভ্রু যুগল কপালের মাঝখানে এসে সন্ধি করেছে যেন। ঢলঢলে দুটি চোখের দৃষ্টি কুঞ্চিত, স্বন্দিহান। চিবুকের মাঝ বরাবর একটা গাঢ় তিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2021 manobsomoy
Theme Developed BY ThemesBazar.Com