মানব সময় ডেস্ক :
সীতাকুণ্ডস্থ ইপসা এইচআরডি সেন্টারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর উদ্যোগে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং গ্রীভ্যান্স সাপোর্ট বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন গতকাল রোববার সকালে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্তের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায়ে সভায় প্রধান অতথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম এবং অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা, সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল, কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুন, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয় শ্রমিক লীগ সীতাকুণ্ড-বাড়বকুণ্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মাহাবুবুল আলম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লিটন চোধুরী, রেডিও গিরির সাংবাদিক সঞ্জয় চৌধুরী, বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আলী, জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির সদস্য মহাবুব চৌধুরী, দৈনিক খবরের কাগজের রিপোর্টার এম কে মুনির, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইদ্রিছ, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড কেন্দ্রের আহ্বায়ক মানিক মণ্ডল প্রমুখ।
সভার শুরুতে জাহাজভাঙা শিল্প সেক্টরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও গ্রীভ্যান্স সংক্রান্ত বিষয়ে ফজলুল কবির মিন্টু এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয় ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২৪ জন শ্রমিক নিহত হয়।
২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩.৫৫ জন শ্রমিক নিহত হলেও এই বছর জুন পর্যন্ত শুধুমাত্র ১ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালে প্রথম ৬ মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৯টি ছিল।
একই সময়ে এই বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা হচ্ছে ১২টি। তথ্যগতভাবে এই বছরের প্রথম ৬ মাসে জাহাজভাঙা শিল্প সেক্টরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার হার এবং দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর হার দুটোই কমেছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তবে ৪টি গ্রিন শিপ ইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা, আরো বেশ কিছু গ্রিন শিপ ইয়ার্ড হওয়ার প্রক্রিয়াধীন থাকায় এবং জাহাজভাঙা শিল্প সেক্টরে পূর্বের তুলনায় ব্যবসা কমে যাওয়ায় -দুর্ঘটনার হার এবং শ্রমিক মৃত্যুর হার কমে গেলেও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য গোপনের যে প্রবণতা পূর্বে ছিল তা এখনো বিদ্ধমান রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার সকল তথ্য আমরা নিশ্চিতভাবে পেয়েছি কিনা তা নিয়ে কিছু সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। তথাপি বলা যায় জাহাজভাঙা শিল্প সেক্টরে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে সেটা বলা যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে, সীতাকুণ্ড উপজেলার ইউএনও কে এম রিফিকুল ইসলাম বলেন, জাহাজভাঙা শিল্পে ভারী পদার্থ নিয়ে কাজ হয় বিধায় এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প। তাই এই শিল্পকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য এবং ইয়ার্ডের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই তথা মালিক-শ্রমিক এক হয়ে সততা এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে যেকোন কঠিন সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব কিছুই নয়। তিনি আরো বলেন, যে কোন দুর্ঘটনায় নিহতদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হয় বিধায় নিহতরা ক্ষতিপূরণ পেলেও আহতরা বেশির ভাগ সময় চিকিৎসা সুবিধা এবং অন্যান্য আইনসংগত ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
সভায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাহাজভাঙা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ভাটিয়ারীতে একটি হাসপাতাল তৈরি করা হলেও সেটি এখন বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ভাড়া দেয়ায় জাহাজভাঙা শ্রমিকেরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উক্ত হাসপাতালটি আরো আধুনিক এবং মানসম্মত করে তা জাহাজভাঙা শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসাবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও সভায় জানানো হয়, এই বছর বিগত ৬ মাসে মালিকের মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুত ১৫ জন শ্রমিককে গ্রীভ্যান্স সাপোর্ট দেয়া হয়।