ডেস্ক নিউজ :
১। বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। নিহত হেলাল উদ্দিন পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধূলা উপজেলাস্থ নিজহোগলা গ্রামে। সে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর জমাদারহাট এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো এবং সেখানে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর পেশায় নিয়োজিত ছিলো। সিএনজি অটোরিকশা চালনোর সুবাধে তার ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি সাথে পরিচয় হয়। ইলিয়াস পেশায় একজন সিএনজি গ্যারেজের মিস্ত্রী। বিগত ০৪ মাস পূর্বে ইলিয়াসের মামাতো ভাইয়ের একটি সিএনজি বিক্রয় করার জন্য নিহত হেলাল উদ্দিনের সহযোগিতা চায় এবং উক্ত সিএনজিটি বিক্রয় করে দিতে পারলে ইলিয়াসের মামাতো ভাই তাদের দুজনকে ০৫ হাজার টাকা বকশিস দিবে বলে জানায়। পরবর্তীতে উক্ত সিএনজিটি ইলিয়াস এবং হেলাল উদ্দিন দুজন মিলে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে সময় ইলিয়াসের মামাতো ভাই খুশি হয়ে ইলিয়াসকে কিছু টাকা বকশিস দেয় এবং সেই টাকা থেকে ইলিয়াস কিছু টাকা রেখে বাকী ০১ হাজার টাকা হেলাল উদ্দিনকে দেয়। তখন হেলাল উদ্দিন ইলিয়াসকে বলে তোর মামাতো ভাই তোকে ০৫ হাজার টাকা দিয়েছে কিন্তু তুই আমাকে মাত্র ০১ হাজার টাকা দিলে কেন? এই কথা নিয়ে হেলাল উদ্দিন ও ইলিয়াসের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ মারপিট হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।
৩। ঘটনাক্রমে ইলিয়াস তার পরিচিত অপরাপর সিএনজি ড্রাইভার মোঃ বখতিয়ার (২৭) ও মনির আহম্মদ @ মেহেরাজ (২৬) নামীয় দুজনকে ভাড়া করে হেলাল উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পণা করে। পরবর্তীতে গত ২৯ নভেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬০০ ঘটিকায় ইলিয়াস সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনকে তার সিএনজি নিয়ে সিএনজি ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভাধীন সিও অফিস সংলগ্ন একটি সিএনজি স্টেশন আসতে বলে। অতঃপর তার কথামতো হেলাল উদ্দিন তার ভাড়ায় চালিত সিএনজি নিয়ে উল্লেখিত জায়গায় এসে ইলিয়াসের সাথে সাক্ষাৎ করে। তখন ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনের সিএনজিসহ তাকে নিয়ে সিএনজি ক্রয়ের কথা বলে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানাধীন ০৯ নং আমুচিয়া ইউনিয়নের পোস্ট অফিস সড়ক থেকে একটু ভিতের দুর্গম এলাকার একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আরও একটি সিএনজি নিয়ে তার অপর সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ হেলাল উদ্দিনের সিএনজির পিছন পিছন তাদের নিকট উপস্থিত হয়। সকলেই উল্লেখিত স্থানে একত্রিত হওয়ার পর মিস্ত্রী ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনকে পূর্বের মারপিট করার হুমকি দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার উপর উপুর্যপরি শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এরপর বখতিয়ার কাঠের লাঠি দিয়ে হেলাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে ও মেহেরাজ তাৎক্ষণিকভাবে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পিঠে ছুরিকাঘাত করে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ইলিয়াস সিএনজি থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে হেলালের মাথায় উপুর্যপরি আঘাত করে এবং সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে ইলিয়াস মৃত হেলাল উদ্দিনের সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ইলিয়াসের দুই সহযোগি বখতিয়ার ও মেহেরাজ মিলে লাশটি যাতে কেউ না দেখে সে জন্য পাশের একটি ধানি জমির উপর রেখে তাদের সিএনজি নিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
৪। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ নিহত সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানায় ০৫ জন নামীয় এবং ৩/৫ জন অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-০২, তারিখ- ০৪/১২/২০২২খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
৫। উক্ত হত্যা কান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করে দ্রæত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে নিহত হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ অধিনায়ক, র্যাব-০৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে। হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও লোহমর্ষক হওয়ায় এবং একজন দুস্থ, গরীব, অসহায়, বিধবা নারীর আবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সহিত আমলে নিয়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ রাত আনুমানিক ১৬৪৫ ঘটিকায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম একটি চৌকষ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রীজ এলাকা হতে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আসামী ১। মোহাম্মদ বখতিয়ার (২৭), পিতা-মোঃ মনু মিয়া, সাং-পশ্চিম শাকপুরা, থানা-বোয়ালখালী, জেলা-চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করে। অপর একটি অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানাধীন চাক্তাই একটি শুটকি আড়তের সামনে হতে উক্ত নৃশংস হত্যা কান্ডের মূল পরিকল্পণাকারী আসামী ২। মোঃ ইলিয়াস (৩৫), পিতা-মোঃ শফিক, সাং-পশ্চিম শাকপুরা, থানা-বোয়ালখালী, জেলা-চট্টগ্রামকে এবং বোয়ালখালী পৌরসভাধীন মিরাপাড়া হতে আসামী ৩। মনির আহম্মদ প্রকাশ মেহেরাজ (২৬), পিতা-মৃত আহমেদ ছফা, সাং-মধ্যম শাকপুরা, থানা-বোয়ালখালী, জেলা-চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীরা উপরে উল্লেখিত সিএনজি অটোরিকশা চালক হেলাল উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে ।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।