২০২০ সালে ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ২৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। এ হিসাবে বাংলাদেশের চেয়ে ১ বিলিয়ন ডলার বেশি পোশাক রফতানি করেছে ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের ছাড়িয়ে যাওয়ার এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকাল রিভিউ ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে গত বছরে শীর্ষ ১০ পোশাক রফতানিকারক দেশের রফতানি, বাজার অংশীদারিত্ব ও প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বরাবরের মতো ২০২০ সালেও বৈশ্বিক বাজারে পোশাকের প্রধান রফতানিকারক ছিল চীন। গত বছর দেশটি পোশাক রফতানি করে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের। একই খাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর রফতানি ছিল ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
রফতানি, বাজার অংশীদারিত্ব ও প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশ দুটি। ২৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির মাধ্যমে একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। পাশাপাশি ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশও আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। শীর্ষ দশের এ তালিকার তৃতীয় অবস্থানের পরে অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, হংকং ও ইন্দোনেশিয়া।
পোশাক রফতানির বৈশ্বিক বাজারে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অংশ বা হিস্যার হ্রাস-বৃদ্ধিও উঠে এসেছে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে। এক্ষেত্রে ২০০০, ২০০৫, ২০১০ ও ২০২০ সালের পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, চীনের বাজার অংশ সম্প্রতি সংকোচনের ধারায় চলে গেছে। ২০০০ সালে বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে দেশটির হিস্যা ছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৫ সালে তা বেড়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে ২০২০ সালে বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে দেশটির অংশগ্রহণ কমে হয়েছে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ।
বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চলতি শতকের সূচনাকালে সামান্য কমলেও বর্তমানে তা প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। ২০০০ সালে বৈশ্বিক রফতানির ২ দশমিক ৬ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে তা কমে হয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ৪ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে বৈশ্বিক রফতানির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতিতে বৈশ্বিক রফতানিতে নিজেদের অংশ বাড়াচ্ছে ভিয়েতনাম। ২০০০ সালে বৈশ্বিক রফতানির দশমিক ৯ শতাংশ করত ভিয়েতনাম। ২০০৫ সালে এ অংশ বেড়ে গিয়ে হয় ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে হয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২০ সালে বৈশ্বিক রফতানির ৬ দশমিক ৪ শতাংশ করেছে ভিয়েতনাম।
শীর্ষ দশ রফতানিকারক দেশের মধ্যে ভারতের হিস্যাও ২০১০ পর্যন্ত বাড়লেও এরপর উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হয়েছে। বৈশ্বিক রফতানিতে ২০০০, ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের অংশ ছিল যথাক্রমে ৩, ৩ দশমিক ১, ৩ দশমিক ২ এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে তুরস্কের অংশ ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩, ৪ দশমিক ২, ৩ দশমিক ৬ এবং ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে এরই মধ্যে ছাড়িয়েছে ভিয়েতনাম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামের বেড়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতেরও পোশাক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ। শীর্ষ রফতানিকারক দেশ চীনের রফতানি আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠন প্রতিনিধিরা বলছেন, ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতেই পারে। কারণ দেশটিতে চীন, জাপান ও কোরিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী আছেন। দেশটির কারখানাগুলোয় উন্নত প্রযুক্তির মেশিন আছে, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্ত এক। সহজেই কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে। বাংলাদেশের চেয়ে লিড টাইম অনেক কম। দেশটি স্যুটসহ আরো অনেক হাই ভ্যালু পণ্য উৎপাদন করে। দেশটির নিজস্ব সক্ষমতায় খুব দ্রুতই বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়া মোটেও অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা হবে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্রেতা দেশ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশটির পোশাকের বাজার পুরোটাই দখলে নিয়ে নিচ্ছে ভিয়েতনাম। অন্যদিকে ভারত ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। রাজ্যভেদে পোশাক রফতানিকারকদের বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে ভারত। গুজরাটের মতো রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ হয় আর কোনো সুবিধা দিতে হয় না। অন্যদিকে আমাদের এখানে অনেক সুবিধা দিতে হচ্ছে। আবার সামনে মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সার্বিক যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে বৈশ্বিক পোশাক রফতানির বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।