বিশেষ প্রতিবেদক:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যুগ যুগ ধরে এই দেশের মাটিতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাস করে আসছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে একসাথে আমাদের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছি।
এই দেশ নির্মাণ করতে চেয়েছি সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে। কিন্তু বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে বেঁচে থাকবার অধিকারগুলো সত্যিকার অর্থে ভোগ করতে পারছি না। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়ী, জায়গা সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।
দেশের হিন্দুদের ৮০ ভাগ জায়গা জমি দখল করেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। দূর্গাপূজার সময় তারা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। অথচ বিএনপি সবসময় সকল সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে ছিল।
তিনি শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের উদ্যোগে লাভলেইনস্থ মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন হলে বস্ত্র বিতরন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। খসরু দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কিছুই নেই , আমরা সবাই বাংলাদেশি। দেশের সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। বিএনপি সেটাকে ধারণ করে। আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তারা সেটাকে ধারণ করে না। যে ধারণ করে না তাকে বারবার এটা পালন করার জন্য বলতে হয়। বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে যারা বাস করে তারা সবাই বাংলাদেশি। সুতরাং এখানে রাজনীতিতে হিন্দু না মুসলিম এই পরিচয়ের রাজনীতি নাই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াই প্রথম পূজামণ্ডপে চাল-ডাল ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখন তো শুনি যুবলীগ-ছাত্রলীগকে পূজামণ্ডপের শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাহলে দেশের পুলিশ বাহিনী কোথায় গেল? তারমানে রাষ্ট্রযন্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর কোনো দায়িত্ব নেই। যারাই হিন্দুদের প্রতিমা ভাঙ্গে, জায়গা দখল করে তাদেরকে পূজা মন্ডপ পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারমানে শিয়ালকে মুরগি পাহারা দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি সকলের অধিকারকে রক্ষা করে একটা সুন্দর সৃষ্টিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলার আহবান জানিয় সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান এবং সবার কল্যাণ কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয় শক্তির জন্য। অসুরের যে শক্তি তাকে বদ করবার জন্যে। অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই উপাসনা। সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং সব রকমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার আরাধনা। এটা বাংলাদেশের সার্বজনীন পূজা।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ ধর্ম সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আবহমান কাল ধরেই এই উপমহাদেশে এই ধর্মীয় উৎসবটি আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে। যে কোন ধর্মীয় উৎসবই সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা অতিক্রম করে মানুষে মানুষে মহামিলন সূচনা করে। শারদীয় দূর্গাপুজার উৎসব সকলের মধ্যে নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। এই উৎসব বাংলাদেশের একটি শ্বাশ্বত সার্বজনীন উৎসব। উৎসব জাতি রাষ্ট্রে সর্বমানুষের মিলন ক্ষেত্র।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের সভাপতি প্রকৌশলী সন্জয় চক্রবর্তী মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক অর্জুন কুমার নাথের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ধর্ম সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু। সন্মানিত অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, সুশীল বড়ুয়া।
বিশেষ বক্তা ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি জয়দেব রায় জয়। বক্তব্য রাখেন, উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শফিকুর রহমান স্বপন, সাংবাদিক হাসান মুকুল, কল্যাণ ফ্রন্টের যুগ্ন আহবায়ক মিহির চক্রবর্তী, এড. শিপন কুমার দে, এড. জালাল উদ্দীন পারভেজ, ফ্রন্টের নেতা গোপাল শর্মা, এড. জুয়েল চক্রবর্তী, সৌরভ প্রিয় পাল, মোহন দে, অপু চৌধুরী আকাশ, বাবু বাহাদুর শাস্ত্রী, মিটুন বৈষ্ণব, রবি নাথ, বাসুদেব দাস, উজ্জ্বল দত্ত, সুব্রত আইচ, সন্জয় বৈষ্ণব প্রমূখ।