মানুষের জীবন খুব অদ্ভুত। যেখানের আঁকে-বাঁকে ভরপুর বিচিত্রতা। আর এই বিচিত্র জীবনে ঘটে অসংখ্য সব বিচিত্র ঘটনা। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দের মিশেলে এগিয়ে চলে জীবন খরস্রোতা নদীর মতো। কখনো মুক্ত পাখির মতো, কখনওবা চুপসে যাওয়া ফুলের মতো। হারিয়ে যায় কত চেনা মুখ, কতশত স্মৃতি। নীল নীলিমায় দূরে কোথায় মন যে হারায় ব্যাকুলতায়। একটা কথা-ই মন জানতে চায়, ‘মন কেন স্মৃতির পাহাড় হাতড়াই’।
মানুষের জীবন তো একটাই। অথচ এ জীবনে কত কিছুই না ঘটে যায়। জীবনের একেকটা মুহূর্ত যেনো একেকরকম মনে হয়। কখনো জমাট বরফের মতো কষ্টগুলো বুকের মধ্যে জমতে থাকে। জীবনটা বড় অসহ্য মনে হয় তখন। মনে হয় এ জীবনের কী দরকার ছিলো? আবার কখনো জীবন ভরে যায় অনাবিল সুখ আনন্দে; তখন মনে হয় জীবন কেন দ্রুত ফুরিয়ে যায়!
একটা সময় জীবনের পুরনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। মনে হয় পুরনো দিনগুলিই বুঝি সুন্দর ছিলো। মনের পর্দায় এসব স্মৃতি হাতড়াতে বড় ভালো লাগে, একা আনমনে। মনটা বাস্তবে ফিরে আসতে চায় না।
কিন্তু বাস্তবে তো আসতেই হবে। আসলে বাস্তবই সব, কল্পনা নিছক একটা মায়া। কল্পনা যদি সত্যি হতো, মানুষের দুঃখ-কষ্ট কিছুই থাকতো না। তবে কষ্ট যে সবসময় খারাপ লাগে তা নয়। অনেক সময় কষ্ট পেতেও অনেক ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে তা জানি না…!
মানব জীবন বড়ই বিচিত্র। প্রত্যাশা প্রাপ্তির বিষয়গুলো বেশ জটিল। কার জীবনে কখন কীভাবে কী ঘটবে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারে না। সব সময় যোগ্যতা দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবনের সব প্রাপ্তি অর্জন সম্ভব নয়, চেষ্টা করলে মানুষ সব কিছু অর্জন করতে পারে না। তারপরও চেষ্টা করতেই হয়, সব গ্লানিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হয় বীরদর্পে। তবেই মিলবে জীবনের সার্থকতা।
আমার কাছে জীবন যা–
কর্মক্ষেত্রের দিক থেকে জীবন আমার রেলগাড়ী। কারণ, যতোদিন শক্তি আছে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দুনিয়াতে বেচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। রেলগাড়ী যেমন নিজ গন্তব্য পেলে থেমে যায়, একদিন আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী আমার জীবনের আয়ুও থেমে যাবে।
প্রেমের দিক থেকে জীবন আমার রংধনু। জীবনে যতো দিন বাঁচবো, আমি চাই প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত আমার এই ভালোবাসায় নিজের মানুষ গুলোকে রাঙ্গীয়ে তুলবো।
স্বার্থের দিক থেকে জীবন আমার স্বার্থপর। যাই করি, সব নিজের স্বার্থে। নিজেকে ভালো রাখতে, নিজেকে উন্নত করতে।
অবশেষে জীবন আমার তেজপাতা সমতুল্য। কারণ, তেজপাতা যখন গাছে থাকে সজিব থাকে, তেমন বাবা-মায়ের আদরে আমি এখন তেমনই আছি। কিন্তু, তারা যখন থাকবেনা। তখন আমি ঠিক তেজপাতার মতোই ঝরে পড়বো মাটিতে। অতোপর হয়তো, পরিবারের সুখের জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কর্ম না করলে তো আর পেটের ভাত পাওয়া যায় না। অন্তঃতত নিজের পরিবারের জন্য তা করতে হবে। অতঃপর তেজপাতার মতো আমার যখন ঘ্রাণ থাকবেনা,মূল্য থাকবেনা, বয়স বেড়ে যাবে তখন ঠিক ঐ ভাবে ছেড়ে ফেলে দেবে আমায়। আর ঠিক তেজপাতার মতোই মাটিতে নিঃশেষ হবে আমার এই জীবন।
এতো কিছু লিখলাম…শেষে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললবো…আসলে জীবনে নিজের বলে কিছুই নেই। কারণ, নিজের সুখে জন্য যাই করবো মুত্যুর পর তার সবই ভোগ করবে অন্যকেউ। তাই নিজের জন্য যদি কিছু করতে চান, তবে ঈমান ঠিক রাখেন। পরকালে মুক্তির জন্য,সুখ লাভের জন্য ইসলামের মূল ভিত্তি অনুসরণ করেন। আল্লাহর দরবারে সঠিক উদ্দেশ্যে কান্নাকাটি করেন। অবশ্যই জীবনের মূল লক্ষ্য খুজে পাবেন।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট – জাহাঙ্গীর আলম
চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, দৈনিক আমার সময়
চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ, দৈনিক আজকের বিজনেস বাংলাদেশ
নির্বাহী সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা
সাধারণ সম্পাদক, রেলওয়ে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন
সদস্য, চট্টগ্রাম রিপোটার্স ফোরাম
ছবির ক্যাপশনঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট – জাহাঙ্গীর আলম