পীরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী
মোঃ আইনুল হক পীরগঞ্জ ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : সোনার বাংলা বিনীর্মানে যারা আত্মত্যাগ নিঃস্বার্থ ভাবে দেশ স্বাধীন করে এনেছিলো তাদের মধ্যে এক জন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপারেশননাল কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম চৌধুরী (খোকা) চৌধুরী আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী । ২০২০ সালে ৩ আগস্ট এই দিনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।নতুন প্রজন্মের কাছে রয়ে গেছে তার আত্মগাথা দেশ প্রেমের গল্প। তার অতীত জীবনের মহা কর্মযজ্ঞ। তিনি দেশের জন্য ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করতে সোনার বাংলার কারিগর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় সীমান্ত মালন,তারাগাপুর,কালিয়াগঞ্জ এবং কুসুমন্দি অঞ্চলে ক্যাম্প করেন এবং সেই ক্যাম্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধ সুসংগঠিত করতে ভারতীয় সেনাদের থেকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা ক্যাম্পের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের শেখানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় মিলিটারীদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।নিজের জীবন বাজি রেখে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে, দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে দেশকে স্বাধীন করে শত্রু মুক্ত করেছিলেন এই বীর সেনা।তিনি ছিলেন যুদ্ধকালীন অপারেশনাল কমান্ডার। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের জন্য,সমাজের জন্য,রাষ্ট্রের জন্য ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হিসেবে শ্রমিক জনতার প্রিয় মুখ ছিলেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়,নায্য পাওনা এবং সম্মানের সঙ্গে যেভাবে কাজ করে গেছেন।স্থানীয় ভাবেও তিনি বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকা চৌধুরী ৩ মে ১৯৪৫ সালে পশ্চিম বাংলার পশ্চিম দিনাজপুর রায়গঞ্জ মহকুমার হেনতাবাদ থানার মহিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা খলিলুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা খতেজা খাতুন এর ৫ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ১ম পুত্র।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তার পরিবার চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের তৎকালীন দিনাজপুর জেলাধীন বর্তমান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। পীরগঞ্জেই স্কুল জীবন শুরু করেন। এরপরে ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যুক্ত হয়ে ১৯৬৫ সালে ইন্ডিয়া পাকিস্তান যুদ্ধে সামিল হন।পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যুক্ত হন। পীরগঞ্জ থেকে তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি পীরগঞ্জ থানা থেকে রিকুজিশন খাতায় স্বাক্ষর করে ৭টি রাইফেল নিয়ে আসে পীরগঞ্জ অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত করেন।এবং ইন্ডিয়ার কালিয়াগঞ্জ মালন হেনতাবাদ কুসমুন্ডি এলাকায় ক্যাম্প করে ট্রেনিং করান। ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন ধীলেন এর সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।ধুকুরঝারী,চান্দোহর,নসিবগঞ্জ এলাকায় উনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতেন। নসিবগঞ্জে বাংকারে ক্যাম্প করে থাকাকালীন হঠাৎ পাকিস্তানি আর্মীরা এটাক করে।শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। চলছে পাল্টাপাল্টি গুলাগুলি। মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলি চৌধুরী খোকার উপস্থিত যুদ্ধ পরিকল্পনা স্থীর দৃষ্টিভঙ্গি শান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সম্মিলিত নেতৃত্ব সেদিন পাকিস্তান আর্মীদের ব্যার্থ পরাজিত হয়ে পেছন ফিরতে বাধ্য করেন। এমনিই তথ্য জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা ।মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক, বাংলাদেশের গর্ব, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের অহংকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার রুহের মাগফিরাত কামনায় তার পারিবার সকলের নিকট দোয়া কামনা করছেন।প্রেস ক্লাব পীরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম রব্বানী বলেন বীরত্বে গাথা এই বীর সেনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। জানাতে হবে আমাদের এই স্বপ্নীল ভূবনে যাদের অবদানের জন্য আমরা এ স্বাধীন দেশের স্বাদ গ্রহণ করছি তাদের কৃতিত্বের কথা।মহান সৃষ্টি কর্তা এই বীর সেনাকে বেহেশতবাসী করুক এই প্রত্যাশা করেন তিনি।