মানব সময় ডেস্ক :

ফেনী’র সোনাগাজীতে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী (৫৭)’কে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামি দুলাল চৌধুরী (৪২)’কে ঢাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

১। “বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্র্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২। নিহত ভিকটিম অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী (৫৭) ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন উত্তর চর চান্দিয়া সাকিনস্থ জমাদার বাজারে হাজী সিরাজুল ইসলামের দোকানে ভাড়াটিয়া হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছিল। গত ৩০ অক্টোবর ২০২২ তারিখ আনুমানিক ১৩৪৫ ঘটিকায় অজ্ঞাতনামা ০৬ জনের একটি ডাকাত দল ০২টি মোটরসাইকেল যোগে এসে স্বর্ণের দোকানের সামনে থামে। পরবর্তীতে ০২ জন দোকানের সামনে দাড়িয়ে পাহারা দেয়; অপর ০৪ জন দোকানের ভিতরে প্রবেশ করে তাদের হাতে থাকা দেশীয় চাপাতি দ্বারা দোকানের মালিক অর্জু চন্দ্র ভাদুড়ী’কে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে দোকানের শো-কেস ভেঙ্গে ও লকার খুলে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। ভিকটিম অর্জু চন্দ্র ভাদুড়ী’র আত্মচিৎকারে আশ-পাশের এলাকা হতে লোকজন জড়ো হলে ডাকাত দলের সদস্যরা ককটেল বিষ্ফোরণ করে জনমনে আতংক সৃষ্টি করে মোটর সাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন ভিকটিম অর্জু চন্দ্র ভাদুড়ী’কে ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হলে উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ফেনীসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

৩। উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের মেয়ে জামাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ০৬ জনকে আসামি করে ফেনী জেলার সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। যার মামলা নং- ০১/২৭০, তারিখ-০১ নভেম্বর ২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৩৯৫/৩৯৬/৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০।

৪। উক্ত অমানবিক, মস্তিষ্ক বিকৃত, নিকৃষ্ট ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উক্ত মামলার তদন্তে সন্দিগ্ধ পলাতক আসামি দুলাল চৌধুরী (৪২) ঢাকার কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১০, ঢাকা এর যৌথ আভিযানিক দল গত ০৭ অক্টোবর ২০২৩ইং তারিখে বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি দুলাল চৌধুরী (৪২), পিতা- আব্দুল ছালাম চৌধুরী, সাং- শর্শা ভিখারী, থানা- সোনাগাজী, জেলা- ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

৫। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে উক্ত ডাকাতি সংঘটনের সময় অন্যান্য সহযোগী আসামিদের সাথে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে ভিকটিম অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী (৫৭)’কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরতর রক্তাক্ত জখম করে স্বর্ণালংকার লুট করে এবং লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার অন্যান্য আসামিদের কাছ থেকে কম দামে ক্রয় করে পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে বলে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, মামলা রুজু হওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে অবস্থান করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত আসামি দুলাল চৌধুরী (৪২) গত ২০২২ সালে ঢাকা জেলার অন্য একটি ডাকাতির মামলায় দেড় মাস কারাভোগ করেছেন বলে নিজ মুখে স্বীকার করে।

৬। উল্লেখ্য, গত ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার আসামী ১। মোঃ রাকিব (২০), পিতা-মোঃ ইউসুফ মাল এবং ২। মোঃ আয়নাল মাল (৩২), পিতা-মৃত আব্দুল কুদ্দুস মাল, উভয়ের সাং- দক্ষিণ ভেচকি, থানা-মঠবাড়িয়া, জেলা- পিরোজপুরদ্বয়কে গ্রেফতার ও ডাকাতি সংঘটিতকালে ব্যবহৃত লাল রংয়ের ০১টি পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। বর্ণিত মামলার পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।

৭। গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।