মানব সময় ডেস্ক :
চট্টগ্রামের মিরসরাই হতে অপহরণের পর গণধর্ষণ এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার মূলহোতা ০১ নং এজাহারনামীয় আসামী মোঃ নুর আলম রনি’কে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
১। “বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। ভুক্তভোগী ভিকটিম চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানাধীন পোলগোগরা গ্রামের বাসিন্দা। ভিকটিম এর সাথে ভুল নাম্বারের সূত্র ধরে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া এলাকার বাসিন্দা সাগর নামক এক যুবকের সাথে মোবাইলে কথাবার্তা হত। কথাবার্তার এক পর্যায়ে সাগর ভিকটিমকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ সাগর ভিকটিমের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ভিকটিমের বাড়ির সামনে আছে এবং তাকে দেখা করতে বলে। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে বাড়ি থেকে বের হলে সাগর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার অপরাপর বন্ধুদের সহযোগিতায় ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক একটি সিএনজি যোগে ফেনী জেলার পরশুরাম বাজার এলাকার অজ্ঞাত ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সাগর ও তার অপরাপর বন্ধু মিলে রাত আনুমানিক ২১৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে জোরপূর্বক ইয়াবা ট্যাবলেট ও মদ খেতে বলে। ভিকটিম ইয়াবা ট্যাবলেট ও মদ খেতে অস্বীকার করলে সাগর হত্যার হুমকি দিলে ভিকটিম খেতে বাধ্য হয়। ইয়াবা ও মদ খাওয়ানোর পর ভিকটিম অচেতন হয়ে পড়লে সাগর ও তার ০৪ জন বন্ধু মিলে সারারাত পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরদিন সকালে ভিকটিমের জ্ঞান ফিরলে রনি তাকে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও দেখায়। এছাড়াও ভিকটিমকে জানায় সে চিৎকার করলে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও জনসম্মুখে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিবে। রনি ও তার বন্ধুদের হুমকির ফলে ভিকটিম ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়। বাড়ি যাওয়ার পর ভিকটিম অসুস্থ হয়ে ৬/৭ দিন শয্যাশায়ী ছিলেন। পরে ভিকটিম সুস্থ হয়ে পরিবারের সবার সাথে পরামর্শ করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
৩। পরবর্তীতে গত ৩০ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ ভিকটিম ফেনী জেলার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আসামী ১। নুর আলম @ রনি (২৮), ২। সাগর (২৩), ৩। রিপন(২৫), ৪। আরিফ(২৪) এবং ৫। সাকিব মুন্সী (২৫) দের বিরুদ্ধে উল্লেখিত গণধর্ষণের ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করে, যার পিটিশন নম্বর-২০০/২০২৩। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত উল্লেখিত অপরাধ আমলে নিয়ে অফিসার ইনচার্জ, পরশুরাম থানাকে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশের মূলে গত ১০ আগষ্ট ২০২৩ ইং তারিখ ফেনী জেলার পরশুরাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ (সংশোধিত ২০২০) তৎসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এ একটি মামলা রেকর্ড হয়, যার নং- ৭/৫৭, তারিখ-১০/০৮/২৩ খ্রিঃ। ধারা- ৯(৩), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এবং তৎসহ ২৯/৩৫ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮।
৪। উক্ত জঘন্য গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত গণধর্ষণ মামলার ০১ নং এজাহারনামীয় আসামী মোঃ নুর আলম @ রনি (২৮) আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে ছদ্মনাম ধারণ করে ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণখান থানাধীন আজমপুর গুনবর মুন্সী স্বরনী এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এবং র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি যৌথ আভিযানিক দল অদ্য ১৫ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখ বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ নুর আলম @রনি (২৮), পিতা- মোঃ শাহাব উদ্দিন মিয়া, সাং- দক্ষিন গুথুমা, থানা- পরশুরাম, জেলা- ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামী বর্ণিত গণধর্ষণ মামলার ০১ নং এজাহারনামীয় পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। এছাড়াও সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল বলে অকপটে স্বীকার করে।
৫। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে