মানব সময় বিশেষ সংখ্যায়
ঈদুল আজহা উপসম্পাদকীয় ||
“অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষা ও যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়ন” এই শ্লোগান বাস্তবায়নে কাজ চলছে। গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষাই বর্তমান শিক্ষার মূলভিত্তি।একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের সঠিক নির্দেশনা বা পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের আনন্দের সঙ্গে বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহযোগিতা করেন। সময়ের আবর্তে শিক্ষকই শিক্ষার্থীর তথা একটি জাতির পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন। একজন শিক্ষকের প্রথম কাজই হচেছ, একটি শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে কার্যকরভাবে শ্রেণিকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো এবং আনন্দময় পাঠদান করা ও সকল শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। নিরাপদ পরিবেশ বলতে কোন শিক্ষার্থী যাতে অন্য শিক্ষার্থী কর্তৃক তিরস্কৃত কিংবা হাসির পাত্রে পরিণত না হয়। সে যা বলতে চায়-তা বলার সুযোগ করে দেওয়া। পাঠদানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করানোই হচেছ শিক্ষকের কাজ। শিক্ষার্থীর বাবা সাধারণ বা অসচেতন তাই পারেনা এগুলো বলার জন্য নয়। একজন শিক্ষক তার মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন গবেষণা পদ্ধতি আবিষ্কার করবেন এবং তা শ্রেণিপাঠে প্রয়োগ করবেন।শিক্ষক নির্দেশিকা বা টিজি’র সহায়তায় শিক্ষক পাঠদান করাবেন। একজন শিক্ষক শুধু বইয়ের শিক্ষা নয়, এর বাইরেও সামাজিক, সাংস্কৃতি ও নৈতিকতা শিক্ষা দেবেন।
মানসম্মত শিক্ষা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে, শিক্ষার্থীদের শেখাতে হলে শিক্ষকদের অবশ্যই পড়তে হবে এবং শিখতে হবে, শিশুদের শিখন দক্ষতা যাচাইকালে তাদের মেধা, দক্ষতা, মনোযোগ, আগ্রহ, কৌতূহল, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।এবং তাদের গাণিতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ের সমাধান করতে দিবেন। যে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তেমন তাগিদ চোখে পড়ে না। অথচ শিক্ষার্থীদের শতভাগ হাজিরা নিশ্চিত করতে স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়াভিত্তিক হোমভিজিট, মা-সমাবেশ, উঠান-বৈঠক, মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বনের বিধান রয়েছে। এসব ব্যাপারে শিক্ষকদের প্রশ্ন করা হলে সাধারণত যে উত্তরগুলো আসে সেগুলো হচেছ- ‘শিশু বাড়িতে পড়তে পারে না, তাদের অভিভাবক নিরক্ষর, অসচেতন, বিবাহ-বিচেছদ প্রাপ্ত দপ্ততির সন্তান, হতদরিদ্র বলে কৃষিকাজ করতে যায়, মেধা অনেক কম বা করোনার সময় অন্যত্র চলে গিয়েছিল ইত্যাদি। শিশুদের প্রতি যে কোন ধরনের ঋণাত্মক মনোভাব বদলানো জরুরি। কারণ, এই শিশুরাই আগামীর বাংলাদেশ। শিক্ষাক্ষেত্রে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচেছন সরকার। এ ছাড়া শিক্ষক ঘাটতি পূরণে স্বচছতার সঙ্গে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতায় প্রশিক্ষণ চলমান।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষায় অংশগ্রহণে এগিয়ে থাকলেও মানে যথেষ্ট পিছিয়ে। প্রাথমিকের এগার বছরে বাংলাদেশের শিশুরা যা শিখে, তা অন্য দেশের শিশুরা শিখছে সাড়ে ছয় বছরে। তৃতীয় শ্রেণির শিশুদের বাংলা পাঠের অবস্থা খুবই করুণ। তাদের ৬৫ শতাংশ বাংলা পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ শতাংশ শিশু কোন রকম বাংলা পড়তে পারে। আবার পঞ্চম শ্রেণি পাস শিশুরা গণিতের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না। মাত্র ২৫ ভাগ নিজ শ্রেণির উপযোগী গণিতে সমাধান করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচির অভাবে এ অবস্থা। এ ছাড়া শিক্ষা পদ্ধতি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও গণশিক্ষায় অপর্যাপ্ততার কারণেও মান বাড়ছে না। এসব বিষয় ‘লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ নামক বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জেনেছি। অবস্থা দু একটি এলাকায় কিছু নতুন ও তরুণ শিক্ষক কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় পরিবর্তন হলেও পুরো দেশের চিত্র কিন্তু খুব একটা পাল্টায়নি।বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পাস করা অনেক মেধাবী তরুণী প্রাথমিক শিক্ষায় যোগদান করেছেন। এ ধরনের অনেক শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে সরাসরি কথা হয়, তাদের কারুর কারুর আগ্রহ ও ডেডিকেশন দেখে আশান্বিত হই যে, আমাদের শিক্ষা ঠিকই এগিয়ে যাবে। তবে, অধিকাংশ তরুণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের এ ধরনের মনোভাব পোষণ করতে হবে, বাস্তবে নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে হবে। তবেই, কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের কাছাকাছি আমরা চলে যেতে পারবো।