নিজস্ব প্রতিবেদক, চরফ্যাশন
চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। নদীতে দিন রাত জাল ফেলেও কাঙ্খিত ইলিশ না মেলায় চরম হতাশায় দিন কাটছে চরফ্যাশনের জেলেদের। অনেকে নদীতে যাওয়া ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। বিভিন্ন এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপে অনেক জেলে নৌকা, জাল ও ট্রলার ফেলে রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পালিয়ে গেছেন।
মৎস্য অফিসের তথ্যের সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশনে প্রায় ৪৪ হাজার ৩শ ১১ জন নিবন্ধীত জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জেলেরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর নদীতে ইলিশ ধরা পরছেনা। গত বছর এসময়ে জালে ধরা পড়েছে ঝাকে ঝাকে ইলিশ। সারাদিন জাল থেকে ইলিশ ছুটানোয় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন জেলেরা।
সরেজমিন চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাহানপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচকপাট গ্রামের জেলে মোঃ মোমিন ও একই গ্রামের মোঃ আবুল কাসেম জানান, নদীতে ইলিশ শিকার করে তারা সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু বর্তমানে নদীতে গিয়ে অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। যৎসামান্য যা পাওয়া যাচ্ছে তা বেচে ট্রলারের তেলের খরচই উঠছে না, প্রকৃতিক জেলে হয়েও জেলেদের চালও পাচ্ছে না তারা।
একই গ্রামের জেলে মোঃ আজাদ উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল রাতে আমরা পাঁচজন জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাই। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাত্র চারটি ছোট সাইজের ইলিশ পেয়েছি। ঘাটে নিয়ে তা বিক্রি করে মাত্র ৪০০ টাকা পাওয়া গেছে। এতে ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি। ভাগবাটোয়ারা করে আমরা টাকা নেবো কীভাবে?’
দীর্ঘদিন ধরে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় অনেক জেলে নদীতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান জেলে মোঃ মাকছুদ।
তিনি বলেন, কোনো কোনো জেলে এই পেশা ছেড়ে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। বর্তমানে জেলের সংখ্যা কমে গেছে। নদীতে মাছ নেই তাই জেলেরা বিভিন্ন এনজিওর থেকে নেওয়া সমিতির কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেক জেলে কিস্তি পরিশোধের চাপে নৌকা, জাল ও ট্রলার ফেলে রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রাম পালিয়ে গেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হোসেন মিনার বলেন, বর্তমানে নদীতে ইলিশের পরিমাণ খুবই কম। তবে আগামী মাসে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন জেলেরা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকার করতে পারবেন।