হোসেন বাবলা – নিজস্ব প্রতিনিধি
দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কিছু অংশ বেসরকারি কোং এর হাতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সৈকতের একাংশ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য টেন্ডার আহবান করেছে। তবে জায়গাটি সিডিএর নয়। তাই সিডিএর ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অবশ্য সিডিএর সূত্রে জানা গেছে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সৈকতের ছোট্ট একটি অংশ প্রাইভেট জোন হিসেবে ইজারা দেয়া হবে। বাকি সৈকত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আর ক্ষুদ্র অংশটির আয় দিয়ে পুরো সৈকতকে নান্দনিক রাখা হবে। বর্তমানের বেহাল দশা থেকে পতেঙ্গা সৈকতকে রক্ষা করে বিশ্বমানের একটি সৈকতে পরিণত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সৈকত বেসরকারি খাতে দেয়ার জন্য আহ্বান করা টেন্ডারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।সিডিএ আগামী দুই-চারদিনের মধ্যে টেন্ডার মূল্যায়ন ও যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে। এর পর আগামী কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
তবে পতেঙ্গায় যেখানে সৈকত গড়ে তোলা হয়েছে সেই ভূমির মালিক সিডিএ নয়। সিডিএ শুধুমাত্র উন্নয়ন কাজ করেছেন। জায়গাটি সিডিএকে হস্তান্তর করার একটি প্রক্রিয়া বেশ আগে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি কার্যকর হয়নি। বর্তমানে পতেঙ্গার সৈকত এলাকার জায়গার মালিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মালিকানা না থাকলে ইজারা দেয়ার সুযোগ থাকে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিডিএ পরের জায়গা ইজারা দেয়ার জন্য টেন্ডার আহবান করেছে, যা বেআইনি এবং পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি করবে। ইজারা দেয়ার প্রধান ও প্রথম শর্ত হচ্ছে মালিকানা। মালিকানা পাওয়ার আগে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় সিডিএর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পতেঙ্গায় বিপুল পরিমাণ জায়গা আমরা সাগর থেকে রিক্লেইম করেছি। এটি সিডিএ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এই জায়গা আমাদের নিকট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ভূমির মালিকানার ব্যাপারটি সুরাহা করা হবে। এটি নিয়ে পরে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি জানান, পতেঙ্গা এলাকায় সিডিএ নির্মিত ছয় কিলোমিটার বিচের মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হচ্ছে। বাকি অংশ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বেসরকারি কোম্পানি এক কিলোমিটারের মতো অংশ ঘিরে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করবে।
পর্যটকদের জন্য ওয়াশরুম থেকে শুরু করে ফুড কর্নারসহ সবকিছু তারা নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে। ওই অংশে প্রবেশ করতে হলে টিকেট কাটতে হবে। সৈকতের অন্যান্য অংশে ওই বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কাউকে টিকেট কিনতে হবে না। টাকা-পয়সাও খরচ করতে হবে না। তবে ওই বেসরকারি কোম্পানিকে সৈকতের পুরো এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। তাদেরকে বাঁধ রক্ষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পুরো এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। নির্মাণ করে দিতে হবে একাধিক সিঁড়ি ও ওয়াশরুম। এতে পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়া পর্যটকেরা বর্তমানের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আমরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে পতেঙ্গা সৈকত তৈরি করেছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে সৈকতটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হয়ে গেছে। রাতে অন্ধকার হয়ে যায়। পর্যটকেরা সৈকতে নামতে পারেন না।
ঘুরতে পারেন না। আমরা ছোট্ট একটি অংশ লিজ দিয়ে ওই আয় দিয়ে পুরো সৈকতকে বিশ্বমানের সৈকতে পরিণত করব। এখন অনেকে বিরোধিতা করছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন। কিন্তু একদিন দেখবেন কঙবাজার সৈকতও আমাদের মডেল অনুসরণ করবে।
উল্লেখ্য যে, বিগত কয়েক বছর ধরে বিচে দোকান মালিক সমিতি ওস্থানীয় লোকজন কিছু অংশ নিজেদের ভূমি দাবি করে কয়েক দফা আন্দোলন করেছেন। একই সাথে তারা সেই সময় থেকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন সহ ক্ষতিগ্রস্থ দোকানীদের অধিকার ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রি, ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় মন্ত্রনালয় এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের ন্যায্য দাবির যুক্তিকতা তুলে ধরেন । বেশ কিছু দিন আন্দোলন টি করোনার কারণে স্থগিত থাকলেও এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুক্তভোগিরা আবারো তীব্র আন্দোলনে যেতে পারেন বলে বিশ্বস্ত জানা গেছে।