বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম :
অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, আমাদের চাওয়া সাধারণ মানুষ যেন মানসম্মত চিকিৎসা পায়। আর মানসম্মত ডাক্তার তৈরির জন্য মানসম্মত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কোয়ালিটি ডাক্তার তৈরির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে মানবিক ডাক্তার তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মা ও শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ এবং বিভাগীয়
প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
এর আগে স্বাস্থ্য্ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সকালে নগরীর উত্তর পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত ( পতেঙ্গা – ইপিজেড)হাসপাতাল নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন।
উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪বছর পরেও ঢাকার বাইরে বড় কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে উঠেনি। চক্ষু, নিউরো আর্থোপেডিক সবকিছুই ঢাকা কেন্দ্রিক। অথচ বড় শহর হিসেবে চট্টগ্রামে এসব জাতীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা। কি কারনে হয়নি এসব সকলে জানে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল, জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নার্স , চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও আধুনিক ল্যাবের অভাব রয়েছে। সুযোগ সুবিধা অপর্যাপ্ত।
তিনি বলেন, পতেঙ্গায় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেছি (৫ সেপ্টেম্বর)। সেখানে এসব নার্স ও কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, প্রশিক্ষণও হয়তো দেওয়া যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পতেঙ্গা – ইপিজেডের মাঝামাঝি স্থানে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নির্মাণ হয়ে গেলে এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা কিছুটা লাঘব হবে এবং দীর্ঘ দিনের দাবি আংশিক পূরণ হতে পারে…!
উপদেষ্টা মা ও শিশু হাসপাতাল কে কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণের সুবিধা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
শুধু সরকারি পর্যায়ে ডাক্তারের সংকট রয়েছে দশ হাজারের মতো।বারো হাজারের বেশি নার্সের সংকট রয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে সেবার পাশাপাশি কিছু কিছু ঔষধ ফ্রি দেওয়া হলেও অনেক ঔষধ ও ল্যাব সুবিধা আমরা রোগীদের এখনো বিনামূল্যে দিতে পারিনি। এটা লজ্জার ব্যাপার।
আশার কথা হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা হচ্ছে। পাশাপাশি সাড়ে ৩ হাজার নার্সও নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে ডাক্তার নার্স সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন পূর্বে জাপানের একটি টিম আমার কাছে এসেছিলো। তারা আমাদের থেকে নার্স ও কেয়ারগিভার নিতে চায়। এজন্য তারা আমাাদের হাসপাতালে সেসব বিষয়ে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষন দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সবকিছু জাপান করবে, আমরা শুধু তাদের সাপোর্ট দিবো। এক বছর মেয়াদে তারা নার্স ও কেয়ারগিভারদের লেভেল থ্রি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে জাপানে নিয়ে যাবে। এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেবে। পুরুষ ও মহিলা কেয়ারগিভার আধা-আধি নেবে। তিনি বলেন, নার্স নিয়োগে বড় বাধা হচ্ছে ভাষা। এজন্য নার্সদের ইংরেজি ভাষা ভালভাবে শেখানো হবে। পাশাপাশি জাপানী ভাষাও শেখানো হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সরকারি পর্যায়ে ৩৭টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬৭ টি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান মানসম্মত নয়। তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ল্যাব ও মানসম্মত শিক্ষক নেই। তাই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ ডাক্তার বের হতে পারছে না। কিন্তু সরকার কোয়ালিটির ব্যাপারে কোন আপোষ করবে না। তাই আমরা সরকারি বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি ম্যাট্রিক্স করছি।
যেসব প্রতিষ্ঠান ম্যাট্রিক্স এর নিচে পড়ে যাবে-সেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে মার্জ করা হবে। যদি ঐসব প্রতিষ্ঠান তারপরেও কোয়ালিটি অর্জন করতে না পারে-তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে। কেননা আমরা কোন অবস্থাতেই চিকিৎসা সেবায় কোয়ালিটির ব্যাপারে আপোষ করবো না।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে অনেক পুরনো হাসপাতাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতোদিন হলেও এ প্রতিষ্ঠান আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করতে না পারার বিষয়টি সুখকর নয়। উপদেষ্টা এ প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, বর্তমানে আমাদের সকলের জীবনে সততার খুব অভাব রয়েছে। এ সততা শুধু আর্থিক ক্ষেত্রে নয় বরং কাজ সেবা সময় ইনকাম- প্রভৃতি সবক্ষেত্রের। সততা নাই বলে আমরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি, সমাজ অস্থির হয়ে পড়েছে, আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা আমাদের অসহিষ্ণুতার প্রমাণ। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মানুষ বিশেষ করে গরীবের জন্য উপকারী কাজ বেশি করে করতে হবে।
হাসপাতাল স্থাপনা নির্মাণ পরিদর্শন কালে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সভাপতি সৈয়দ মোর্শেদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মঞ্জুরুল ইসলাম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, সিভিল সার্জন ডা.জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পরে তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ও জরুরি সেবাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।