নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় প্রতারণা মামলা থেকে রেহাই পেতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করায় এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কুসুম্বা ইউনিয়নের ছোট বেলালদহ গ্রামের (মেডিকেল মোড় এলাকার) বাসিন্দা আকবর আলী’র মেয়ে এবং ৭নং প্রসাদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খাঁন এর আপন ভাগ্নী আফিমা সুলতানা মিতু নামে এক নারী এবং তার পরিবারের লোকজন সম্প্রতি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মিতু’র বাবা-মা দাবি করেন যে, তাদের মেয়ে ১০/১২ টি বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বহু বিবাহের নামে প্রতারণা করে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করার বিষয়টিও সত্য নয়। প্রকৃত পক্ষে তাদের মেয়ের দুর্ভাগ্যবশত দুই- তিনটি বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর সম্পর্ক বিছিন্ন হলেও তাদের নিকট থেকে কোন মোহরানা আদায় করা বা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ,প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রথমে মান্দার প্রসাদপুরে শহিদুল ইসলামের ছেলে সামসুল আরেফিন ওরফে সুজনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর সেখান থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর নানা-মামা এবং খালার পরিচয়ে একের পর এক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করেন মিতু। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। কারণ তার রয়েছে প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজন। তার ব্যাপারে কেউ কিছু বললেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পরে এসব ব্যাপারে কেউ সমঝোতা করতে চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে। টাকা দিতে পারলে ভালো, আর দিতে না পারলেই মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করাই এ চক্রের কাজ।
প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মিতু একাধিক ছেলের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এ পর্যন্ত সে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ জনের অধিক ছেলেকে অভিনব কায়দায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তাদের সবাইকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছেন।
তাদের মধ্যে প্রসাদপুর ইউনিয়নের ইনায়েতপুর (মন্ডলপাড়া) গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে এবং মান্দা কৃষি ও কারিগরি কলেজের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ফজলে রাব্বি (২৮) একজন।
সম্প্রতি তার পেয়ারা বাগানে পেয়ারা নিতে গিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা শুরু করে আফিমা সুলতানা মিতু (২৮) নামে ওই নারী। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে বর্তমানে মেডিকেল মোড় (শ্মশানঘাটি) এলাকায় একটি তিন তলা বিশিষ্ট নিজস্ব ভবনে বিলাশ বহুলভাবে জীবনযাপন করছে মিতু।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভুয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন জি.আর ২৭১/২০২৩ (মান্দা) ধর্ষণ মামলায় মান্দা কারিগরি ও কৃষি কলেজের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ফজলে রাব্বিকে আটক করা হয়। কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশ গভীর রাতে এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে আটক করায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান স্থানীয়রা।
ফজলে রাব্বিকে ফাঁসাতে যে প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্টের কপি দেওয়া হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই আইডিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকের রেজিস্ট্রার খাতায়। অন্যদিকে এ রিপোর্টে জাহিদ হাসান নামে যে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) নাম পদবি উল্লেখ করা হয়েছে তিনি এ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকের কেউ না বলে জানিয়েছেন আইডিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকের মালিক গ্রুপের পরিচালক আমিনুল ইসলাম।
ভুয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ধর্ষণ মামলায় গত ১৮ জুলাই ফজলে রাব্বি জামিন পান। জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। সেসময় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ৭নং প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন মন্ডল।
ফজলে রাব্বি’র আইনজীবী মো. আতিয়ার রহমান মিথুন বলেন, ফজলে রাব্বিকে আগাম জামিন দিয়েছেন আদালত। শুনানিতে ফজলে রাব্বি’র পক্ষে অংশ নেন নওগাঁ জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল খালেক এবং বিশ্বজিৎ কুমার সরকারসহ কয়েকজন আইনজীবী।
এরপর আবারও গত ১৩ আগস্ট প্রতারক নারী আফিমা খাতুন মিতু বাদী হয়ে নওগাঁ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনায়েতপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের ফজলে রাব্বি মন্ডল, আব্দুল মতিন,মুরাদ হোসেন মাফি এবং চকখোপা গ্রামের আরিপ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ১০৭ /১১৪/১১৭ (৩) ধারায় হুমকি’র মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ৫১৮ মিস/২০২৩ (মান্দা)। ভিত্তিহীন মামলায় ফজলে রাব্বি মন্ডল, আব্দুল মতিন এবং মুরাদ হোসেন নওগাঁ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিতভাবে তাদের আপত্তি দাখিল করায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
এর আগে এবং ওই মিথ্যা মামলার চাঞ্চল্যকর রহস্য ফাঁস হওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এব্যাপারে প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, বহুবিবাহের নামে অর্থ আদায় করাসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানী করায় তাদের কাজ। আর সেকারণে ভুয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ধর্ষণ মামলা করার পর হেরে যাওয়ার ভয়ে এবং প্রতারণা মামলা থেকে রেহাই পেতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মান্দা উপজেলা প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। এ ঘটনায় প্রতারক আফিমা সুলতানা মিতু’র উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তিনি
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy