কী লিখব, কিভাবে শুরু করবো; তার জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। সাংবাদিকের জন্য ভূমিকা বা প্রারম্ভিকতা খুঁজে বের করা চিন্তার ব্যাপার। পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ বা প্রতিবেদন লেখার শুরু কয়েকটা বাক্যকে ইন্ট্রো বলা হয়। ইন্ট্রো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠক পড়া শুরু করে ভালো লাগলে শেষ করে। সুতরাং শুরুটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমি যখন কোন একটি বিষয়ে লেখার জন্য মনস্থির করি। তখন বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবি। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটু পড়াশোনার চেষ্টা করি। সময়-সুযোগ হলে বন্ধুদের সাথে একটু আলাপ করে নেই। তারপর লেখা শুরু করি। সাধারণত প্রথম একটি প্যারা লেখার পর বিরতি দেই। আবার ভাবি, পড়াশোনা করি বিষয়টির উপর। এরপর আবার লেখা শুরু করি। এভাবে একটি প্রবন্ধ লিখতেই কমপক্ষে দু’দিন লেগে যায়। শেষে পত্রিকায় মেইল করার প্রস্তুতি হিসেবে বাক্যগঠন, বানান প্রভৃতি ঠিক করার চেষ্টা করি। তারপর সংশ্লিষ্ট পত্রিকাতে নিয়মিত চোখ রাখি। কবে প্রকাশিত হবে। প্রকাশিত হলেই যে সেটিকে ছেড়ে দেই, তা নয়। সেটা আবার পড়ি। দেখি কোন জায়গায় কী পরিমার্জন, পরিবর্তন হলো।
এভাবেই একটি প্রবন্ধ পরিপূর্ণতা পায়। কয়েকটি লেখা ছাপাতে দেরি হলে যোগাযোগ করি, উত্তর মেলে বক্তব্য স্পষ্ট নয়। পরিবর্তন করে দেই, তখন তারা বিবেচনা করে প্রকাশ করে। পুরো ব্যাপারটার সময়ে আমি একটু ঘোরের মধ্যে থাকি। আর প্রকাশ হলে অন্যরকম অনুভূতি। এই ভালো লাগা অনুভূতি দুই কারণে হয়। প্রথমত, অভিজ্ঞ সম্পাদক এটাকে প্রকাশযোগ্য করে পাঠককে জানানোর তাগিদে প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়ত, প্রকাশিত প্রবন্ধটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এবং বন্ধু-বান্ধবের ডিজিটাল করতালি নেওয়া।
যা হোক, চাইলেই তো আর ভালো লেখা যায় না। এজন্য প্রচুর প্রস্তুতি নিতে হয়। কয়েকটি বিষয় সামনে রাখতে হয়। কী লিখবো? কেন লিখব? কাদের জন্য লিখব? অর্থাৎ আমার পাঠক কারা? কোন শ্রেণির, কোন বয়সের? প্রবন্ধ লেখার জন্য এটি খুবই অনস্বীকার্য। ব্যবসার জন্য পণ্য, ক্রেতা, বিক্রয়ের স্থান নিয়ে ভাবতে হয়, তেমনি লেখার জন্য কী বিষয়, পাঠক কারা, কোন পত্রিকায় কোন পাতার জন্য উপযোগী- তা নিয়ে ভাবতে হয়। সব মিলিয়ে একটি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, লেখাটি জাতীয় দৈনিক না কি অনলাইন পোর্টালের জন্য? যদিও এটা নির্ভর করে বিষয়বস্তুর ওপর।
২০১৪ সালের শুরুর দিকে জোরালোভাবে ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস লিখতে শুরু করি। বন্ধুরা উৎসাহ দিতে থাকে। একসময় ভালো লাগা বাড়তে থাকে। ভাবলাম, যে পরিমাণ সময় ফেসবুকে দেই, আরেকটু দিলে তো পত্রিকায় লিখতে পারি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এছাড়া ২০০৬ সালে দৈনিক আজকের কাগজ ও যায়যায়দিন পত্রিকায় কিছুদিন প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ২০০৯ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হই। বর্তমানে যেহেতু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত; তাই অপ্রয়োজনে ফেসবুকে সময় কাটাতে পারছি না বা সময় নষ্ট করার সময় পাই না। তাই বলে ফেসবুক ব্যবহার কম করি তা কিন্তু নয়- সেটা প্রয়োজনীয় মাত্রায়।
সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম ফেসবুক। স্বাধীন মত প্রকাশ তথা লেখালেখির ভুবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হচ্ছে ফেসবুক অভ্রের শুভ্রতা দিয়ে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের অনেকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফেসবুকের আশীর্বাদ গ্রহণ করছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। লেখার মাধ্যমে তারা নিজেদের ইচ্ছা, সুখ-দুঃখ, আবিষ্কার, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছেন। অনেকে অপ্রকাশিত কবিতা, অর্জন, ভ্রমণ কাহিনি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ পোস্ট করছেন। ফেসবুকের সূত্রপাত না হলে এসব সৃজনশীলতা হয়তো দেখতে পেতাম না। ‘নাগরিক সাংবাদিকতা’র ছোঁয়ায় অনেক সময় ফেসবুকের নিউজফিডে ভেসে আসে বিভিন্ন নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অনেক ক্ষেত্রে এসবের প্রতিকারও আমরা দেখতে পাই। বিভিন্ন পোস্ট পাই প্রবাদ বাক্যের, সুখবর, হাসি-তামাসা ও সু-পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় তথ্য। পুরনো বন্ধুদের খোঁজ, নতুনদের সার্কেল বাড়ানো- সবই হয়েছে এই যোগাযোগের ব্যাপ্তিতে। দেশে-বিদেশে বয়সভেদে চলছে কুশল বিনিময়। বিশেষ দিন, জন্মদিন বা নতুন সংসারের শুভকামনা অনেকের জীবনে নতুন প্রেরণা জাগায়। দুঃসংবাদ বা দুর্ঘটনাতে মিলছে সান্ত্বনা বা শোকবার্তা। ফেসবুকের বদান্যতা না থাকলে শিশু রাজনের হত্যাকারীরা হয়তো পার পেয়ে যেত। অনেক জরুরি অবস্থা বা বিপদে পড়েও অনেক সহযোগিতা মিলছে। যেমন হঠাৎ করেই কোন মুমূর্ষু রোগির জন্য রক্তের প্রয়োজন। ফেসবুকের কল্যাণে অনেক অপরিচিত মানুষ রক্ত দিয়ে সাহায্য করছে। অনেকে হারানো ছেলে-মেয়েকেও ফিরে পেয়েছে।
তবে কিছু নেতিবাচক দিকও যে রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আসলে পৃথিবীর সবকিছু ভালো ও মন্দের সংমিশ্রণ। ফেসবুকের ব্যাপারটা হয়েছে বটবৃক্ষের মতো। অক্সিজেন ও ছায়া দেবে, আবার উপড়ে যেতে পারে। কে কোন দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার করছে- সেটাই বিচার্য। নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে আইডি চুরি, অযথা বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, অধিক সময় ব্যয় করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগ কম দেওয়া প্রভৃতি। যদিও এগুলো শুধরে নেওয়া যায় একটু সচেতন হলে। এছাড়া বড় ধরনের মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দেশের বা কারো ব্যক্তিগত ক্ষতিও হতে পারে। সেইসঙ্গে ফেসবুক এখন সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি সাধুবাদযোগ্য। ‘আরব স্প্রিং’র মতো বিপ্লব ঘটাতে ফেসবুক অসামান্য অবদান রেখেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে গণজাগরণ মঞ্চ, শিক্ষায় ভ্যাট প্রত্যাহার, তনু হত্যার বিচারের দাবি আদায়ের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ফেসবুক।
সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেককেই তাড়া করে ফেরে আর সামাজিক যোগাযোগ দেয় হাতছানি। এই দুয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করাটাই এখন অনেকে ‘কিছু একটা করার উপায়’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেটা হতে পারে দেশের জন্য, দশের জন্য। তারা বুঝে গেছেন, একা একা কিছু করা কঠিন। তাই সহজ অথচ কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে এ ডিজিটাল প্লাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। কেননা ফেসবুকের সুবাদে একজন পাঁচ হাজার বন্ধু বানাতে পারেন। আর তাকে ফলো করতে পারে অগণিত মানুষ। সবাইকে একছাতার তলে আনা সম্ভব না হলেও কিছুসংখ্যক তো আসবেই। এভাবে ‘নেট প্র্যাকটিস’ চালিয়ে যেতে হবে নতুন সৃষ্টির লক্ষে।
আরও পড়ুন- সেলফিতে ঠোঁট বাঁকা করেন কেন?
আমরা যারা ভালো লিখতে পারি না অথচ ভালো ফেসবুক পাঠক; তারা কিন্তু এগিয়ে আসতে পারি। সুপারিশের তীর নিক্ষেপ, তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা যদি দু-এক বাক্য মন্তবের ঘরে জুড়ে দেই, তবেই কর্ম সম্পাদন হয়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই শুধু ‘পছন্দের’ বাটন চেপে দৌড়ে পালান, অনেকে ভাবেন- সময় কোথা সময় নষ্ট করার। তাতে হয়তো নব্য লেখকদের সান্ত্বনা মেলে কিন্তু খুব একটা উৎসাহ পান না। উৎসাহের জন্য দরকার বাক্য বিনিময়। সমান আলোচনা, ভালো ও মন্দ।
গতবছর এপ্রিলে ফেসবুকের এফ ৮ নামের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বেশকিছু টুল উন্মুক্ত করেছে। ফেসবুকের ডেভেলপার প্ল্যাটফর্ম গ্রুপের প্রধান ডেব লিউ তার কি নোট দেওয়ার সময় ফেসবুকের কোট শেয়ারিং ফিচারটির কথা বলেন। এ ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার প্রিয় লেখাটির কোনো কপি-পেস্ট ছাড়াই হাইলাইট দেখতে পাবেন। ফেসবুক সেভ বাটন নামের আরেকটি নতুন ফিচার উন্মুক্ত করেছে, যা ২০১৪ সালে সেভ অন ফেসবুক ফিচারটির মতোই ব্যবহারকারীকে তার প্রিয় লেখা, পণ্য, ভিডিও ফেসবুক সেভ ফোল্ডারে সংরক্ষণ করার সুবিধা দেবে। উল্লেখ্য, প্রতিমাসে ২৫ কোটি ব্যবহারকারী ফেসবুকের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সংরক্ষণ করে রাখে।
ফেসবুকের লক্ষ্য- গতবছরে ফেসবুকের ডেভেলপার কমিউনিটি ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ফেসবুকে ২.১ বিলিয়ন মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে। ওই সম্মেলনে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের ৭শ’ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়া তিনি বিগত ১২ বছরের সাফল্য তুলে ধরেন এবং আগামী ১২ বছরের একটি রূপরেখা ব্যাখ্যা করেন। এখানে সাহিত্যকে সমৃদ্ধি করতে ওই রূপরেখায় কিছু উল্লেখ না করলেও এটা যে একটা আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করতে যাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আশা করছি, ফেসবুক অঙ্গনের অনেক শখের কর্মী হয়তো সামনে নামকরা লেখক হয়ে উঠবেন। তাই পাঠকের কাছে বিনয়-তারা যেন এক পা এগিয়ে আসেন। পরিশেষে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল লেখনী বা প্রচারের মাধ্যম ফেসবুক সমাজ উন্নয়নে ‘বিদ্যাপীঠ’ হিসেবে কাজ করুক- সেই প্রত্যাশা। আর ফেসবুকের উদীয়মান লেখকদের জন্য রইলো অগ্রীম হাজারটা লাইক ও শুভকামনা।
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy