বাংলাদেশের ই-কমার্স বিজনেসের প্রথম সারিতে যাদের নাম আসবে, তাদের মধ্যে আদনান ইমতিয়াজ হালিম অন্যতম। তিনি বর্তমানে সেবা ডটএক্সওয়াইজেডের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটি মূলত এমন একটি সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে বিভিন্ন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে ও একজন ক্লায়েন্ট সরাসরি সেবা নিতে পারেন। এটি ২০১৫ সাল থেকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।
সেবার সাফল্যের নানা দিক এবং ই-কমার্স বিজনেসের অপার সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন সেবা’র সিইও আদনান ইমতিয়াজ হালিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কর্পোরেট আস্কের সিইও নিয়াজ আহমেদ-
জাগো নিউজ : সেবা’র সফলতার কারণ কী?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : সেবা’র একঝাঁক দক্ষ নিবেদিত প্রাণ কর্মী মূল চালিকা শক্তি। সেবা মূলত একটি প্লাটফর্ম- যা বিভিন্ন সার্ভিসদাতা এবং কাস্টমারকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। সুতরাং দক্ষ টিম, সম্মিলিত প্লাটফর্ম এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষাই সেবার সফল হওয়ার মূল কারণ। সেবা কোন প্রোডাক্ট সেল করে না, শুধু সার্ভিসদাতাদের আর ক্লায়েন্টদের মাঝে বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
জাগো নিউজ : ই-কমার্স বিজনেসে অধিকাংশ তরুণের ব্যর্থতার কারণ কী বলে মনে করেন?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : যেকোন ব্যবসাই বহুবিধ দক্ষতার সমষ্টিগত ফলাফল। আমরা সবাই ব্যবসার মুনাফার দিক দেখি; ব্যবসা দাঁড় করাতে যে কষ্ট, যে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়- সেটা দেখি না। এজন্যই অনেকে ব্যর্থ হন। ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। আমি অনেককেই চিনি, যারা শুরুতে ভালো করেননি; কিন্তু এখন তাদেরই ই-কমার্স ব্যবসার মডেল ধরা হয়। তাই আমি মনে করি, প্রতিশ্রুতি রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ইউনিক হতে হবে। কেননা প্রতিটি ব্যবসাই একপ্রকার সাহায্য।
জাগো নিউজ : ই-কমার্স বিজনেস কিভাবে শুরু করতে হয়?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : প্রথমত প্রোডাক্ট সেল করতে চাচ্ছেন না কি সার্ভিস- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কিছু বিজনেস অনেকটা আইডিয়া নির্ভর। আইডিয়া নির্ভর বিজনেসে সার্ভিস দিতে কিছু লোক লাগে, সফটওয়্যার তৈরি করতে হয়। তবে এদের কোন প্রোডাক্ট নেই; অপরের প্রোডাক্ট, এরা কাজ করছে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে। আবার অন্যদের কথা ভাবলে দেখবেন, তারা প্রোডাক্ট দিচ্ছে, সেইসঙ্গে সার্ভিসও সহজ করেছে। যদি প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে চান, মূলধন তাহলে সে অনুযায়ী লাগবে। আর শুধু সার্ভিসদাতা হলে কম পুঁজি নিয়ে শুরু করতে পারবেন। ই-কমার্স বিজনেস করতে টিআইএন, কোম্পানির অ্যাকাউন্ট, ভ্যাট সার্টিফিকেট ও সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র রাখতে হবে।
জাগো নিউজ : কিভাবে অগ্রসর হলে এ পেশায় ভুল কম হবে?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : যেকোন একটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে দুই বছর জব করে আসুন। দুই বছরের মধ্যে আইডিয়া নেওয়া, কী কী ভুল হতে পারে, ভুলগুলো কিভাবে এড়িয়ে চলা যায়, ভুল হলে কিভাবে শোধরানো যায়, চ্যালেঞ্জগুলো বোঝা এবং হাতেকলমে কাজগুলো জানা। কারণ নিজে ভুল করে শেখার চেয়ে অন্যের ভুল থেকে শেখাই ভালো। আর যেকোন কাজে সফল হতে কমপক্ষে ১০ হাজার ঘণ্টা কাজের পেছনে লেগে থাকতে হয়।
জাগো নিউজ : এ পেশায় কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : কমিটমেন্ট ঠিক রাখাটাই বিজনেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য যথাযথ পরিকল্পনা, ইনভেন্টরি চেক করা এবং সব ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম বজায় রাখা জরুরি। আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিস, স্টোর, জনবল সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। সামর্থ ও দুর্বলতাগুলো জানুন। তাহলে নেগেটিভ ফিডব্যাক আসবে না, বরং রিপিট বিজনেস আসবে।
জাগো নিউজ : ই-কমার্স বিজনেস এগিয়ে নিতে শিক্ষাক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আনা উচিত?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : একজন শিক্ষার্থী তিন থেকে পাঁচ বার ইন্টার্নশিপ করলে তাদের প্রাক্টিকাল জ্ঞান বাড়ে। তারা বিজনেসের গ্যাপ বুঝতে পারে। প্রতিষ্ঠানের কাঠামো বুঝতে পারে। চ্যালেঞ্জ বুঝতে পারে। এতে তাদের ভেতরে ডিসিশন টেকিং স্কিল, ক্রিটিকাল থিংকিং স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল আরো উন্নত হয়। আমাদের দেশের পুঁথিগত শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব শিক্ষার অনেক ব্যবধান। তাই শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে পারলে তাদের পক্ষে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা আরো সহজ হবে।
জাগো নিউজ : এ পেশায় নতুনদের কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : নতুনদের মাঝে অস্থিরতা দেখতে পাই, তারা খুব দ্রুত সফল হতে চান। স্টেপ বাই স্টেপ ক্যারিয়ার গ্রোথ নিয়ে কম লোকই ভাবেন। ক্যারিয়ার নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। যেকোন একটি চাকরি পাওয়াকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন। তবে যেটা ভালো লাগে; সেটাই করুন। ভালো লাগার জায়গায় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন। কারণ জীবনটা আপনার।
জাগো নিউজ : এ পেশায় ক্যারিয়ার গ্রোথ কেমন?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম : এটি নতুন সেক্টর। ক্যারিয়ারের শুরুতে একে বেছে নিলে সামনের দিনগুলোতে এই সেক্টর যখন এগিয়ে যাবে; তখন আপনিই অভিজ্ঞদের সম্মুখভাগে থাকবেন। তবে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি এই সেক্টরে কাজ করতে প্যাশনেট কি না। আপনি যদি প্যাশনেট থাকেন, আপনার যদি ডিটারমিনেশন থাকে, তাহলে সাফল্য সুনিশ্চিত।
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy