দুই মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সূর্যের সব রঙ-ই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। প্রথমে টুকটুকে লাল, হঠাৎ সেই লাল পাল্টে হয়ে যায় কমলা রঙ, তারপর হলুদ, সবশেষে সাদা।
ইউটিউব, ফেসবুকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি বা ভিডিও দেখে দেখে যারা সেখানে যেতে না পারায় আফসোস করেন, তাদের জন্য আছে সুখবর। সেই সুখবরটা হলো, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আর সেই মায়াবী সৌন্দর্য দেখতে ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমিয়েছেন শত শত পর্যটক। চাইলে সেই দলে ভিড়ে যেতে পারেন আপনিও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখেই দেখা মিলছে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে শীতের মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষারশুভ্র হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরফশুভ্র হিমালয়ের গায়ে সূর্যের আলো পড়লেই তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানান রূপ দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীন বা বাইনোকুলার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে না। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে খালি চোখেই তা দেখা যাবে। মোহনীয় এ দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় ভিড় করতে শুরু করেছেন। কেউ একাকী, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে মনোমুগ্ধকর ওই দৃশ্য দর্শনে যাচ্ছেন।
নানা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট (মানুষ পারাপার) চালু হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
পঞ্চগড়ে গেলে কেবল হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘাই দেখা হবে না; একইসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সীমান্ত নদী মহানন্দায় সূর্যাস্তও দেখা যাবে। এছাড়া রয়েছে সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা সবুজের নৈসর্গ চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের আনন্দ ধারা, শিশুপার্ক, মোঘল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়ার মাজার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বদেশ্বরী মন্দির (সীতার ৫১ পীঠের এক পীঠ), পাথর সমৃদ্ধ রকস মিউজিয়াম, প্রাচীন ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নারসহ আরও অনেক কিছু। এখানকার ভুগর্ভস্থ ও নদী থেকে পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও যে কারোরই ভালো লাগবে।
পঞ্চগড় জেলা মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা এবং বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা পর্যন্ত হানিফ, শ্যামলী বা নাবিল পরিবহনের এসি/ননএসি বাস চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সৈয়দপুর থেকে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকারে করে যাওয়া যাবে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় যাওয়া শিক্ষার্থী ফরহাদুজ্জামান শেখর বলেন, ‘শুনেছিলাম, তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে এখানে এসেছি। খালি চোখে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ রূপ দেখেছি। আমি আজীবন এই দৃশ্য ভুলতে পারব না। তেঁতুলিয়া বেড়াতে আসা সার্থক হয়েছে।
রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় বনভোজনে যাওয়া সীমা আখতার বলেন, ‘বনভোজনে এসে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাব, আশা করিনি। হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’
আরিফ সৈকত নামে অন্য এক পর্যটক বলেন, ‘ঢাকা থেকে কষ্ট করে এখানে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে আমি দারুণ খুশি। আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এককথায় অসাধারণ, যা বলার বাইরে।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম শাহিন জানান, তেঁতুলিয়ায় আবাসিক কোনও হোটেল না থাকায় জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে অনেক আগে নির্মিত ডাকবাংলো এবং অন্য পাশে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে রাতযাপন করা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সময় এ বাংলো দু’টি বুকিং থাকায় পর্যটকরা বেড়াতে এসে পড়েন বিপাকে। আগন্তুক পর্যটকদের রাতযাপনের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বুকিং না পাওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা সম্ভব হয় না। ফলে রাতযাপনের জন্য পর্যটকদের ফের ফিরে যেতে হয় পঞ্চগড় জেলা শহরের আবাসিক হোটেলে। পর্যটন মোটেল বা আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। পর্যটক বাড়লে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি সৃষ্টি হবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থানের। পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া উপজেলার আগামী দিনে আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তিনি
তেঁতুলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সানিউল ফেরদৌস জানান, তেঁতুলিয়া নামের কারণেই সর্বস্তরের মানুষের এখানে আসার আলাদা একটা আগ্রহ কাজ করে। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকই এ পথ ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া নানা কারণে এখানে পর্যটকরা আসেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সীমিত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তা দিয়েই সব বয়সী মানুষদের জন্য অবকাশ যাপন কেন্দ্র, স্যানিটেশনসহ আকর্ষণীয় কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy