স্বরুপকাঠী প্রতিনিধিঃ
জীবনের শেষ বয়সে এসে সন্তানদের অযত্ন আর অবহেলার কারণে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন ৬ সন্তানের জননী সাফিয়া বেগম। পিরোজপুরে নেছারাবাদ উপজেলার মাহমুদকাঠি ৯নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল হামেদ মিয়ার ষাটোর্ধ ধর্মপরায়ন স্ত্রী জীবনের সবটুকু দিয়েছেন পরিবারের জন্য স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় ৭ বছর হলো। বার্ধক্য, রোগাক্রান্ত আর স্বজন বিচ্ছিন্ন হয়ে সাফিয়া বেগমের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এখন শুধুই নিঃসঙ্গতা।
কথাও ঠিক মতো বলতে পারেনা সাফিয়া বেগম জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে এসে ছেলে মেয়েদের কাছে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে ছলছল চোখে জানান, আমার ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে। আমি ছারছিনার ভক্ত সব সময় পর্দায় থাকতাম। স্বামীর অল্প আয়ে সংসার চলতো। সন্তানদের কোলেপিঠে করে বড় করেছি। ওদের বাবা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় করে কঠোর পরিশ্রম করতেন। নিজেরা না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে খাবার দিতাম।সামান্য এই কথাটা বলতে অনেক কষ্টো হয় তার সাফিয়ার।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ৪ মেয়েকে ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে মাহাবুব একটু অসচ্ছল যখন যে কাজ পায় তাই করে। আর বড় ছেলে ছিদ্দিক থাকেন ঢাকায় তার সন্তানেরা শিক্ষিত একজন সরকারি নার্স। কিন্তু অর্থলোলুপ বড় ছেলে বাবাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করিয়ে দেয়ার কথা বলে বাবার স্বাক্ষর নিয়ে তার জমিজমা সবটুকু নিজের নামে লিখেয়ে নেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের নামের বয়স্ক ভাতার টাকাটাও নিজের মোবাইলে পাওয়ার ব্যাবস্থা করে সুকৌশলে। বড় ছেলের ঢাকার বাসার বাথরুমে পড়েগিয়ে মায়ের পা ভেঙে যায় তখন মাকে সামান্য চিকিৎসা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায় ছিদ্দিক।
একমাত্র বেকার ও অর্থে দুর্বল ছোট ছেলে মাহাবুব আলম থাকে চট্টগ্রাম তার স্ত্রী বাড়িতে থাকার সুবাদে শাশুড়ির দেখা শুনা করেন। ছোট বৌ জানান, আমার শাশুরীর ঢাকায় বসে পা ভেঙে যায় তখন আমার ভাসুর ছিদ্দিক তাকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায়। সে এখন শারীরিকভাবে অচল দুই বছর ধরে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে ঐ ক্ষতস্থানে পোকায় ধরে গেছে। আমার স্বামীর অল্প আয়ের সংসার চালিয়ে শাশুড়ির চিকিৎসা করাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ফার্মেসী থেকে ঔষধ বাকিতে এনে চিকিৎসা চালাচ্ছি। আমার বড় ভাসুর বয়স্ক ভাতার কথা বলে যায়গা জমি সব লিখিয়ে নেয়ার কারনে আমার ননদেরাও কেউ তার মাকে দেখতে আসেনা খোজ খবর নেয় না। এ নিয়ে কয়েক বার শালিসি বৈঠক হয়েছে কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।
বড় ছেলে ছিদ্দিকের নম্বরে ফোন দিয়ে তার স্ত্রী রিসিভ করে। তার অসুস্থ শাশুড়ির দেখাশুনা না করার কারণ জানতে চাইলে বলে, আমরা ঢাকায় থাকার কারণে দেখাশুনা করতে একটু সমস্যা হয়। জমি লিখে নেয়ার কথা শিকার করলেও সাফিয়া বেগম (শাশুড়ীর) ভাতার টাকা ছোট ভাই মাহবুব এর ছেলের মোবাইলে আসে বলে জানান তিনি।
পাশের বাড়ির সুমি জানান, তার ৬টি ছেলে মেয়ে কিন্তু কেউ তার পাশে নেই। এখন সাফিয়া বেগমের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ এখন তার পাশে একজন লোক সব সময় থাকা দরকার। তাকে সুস্থ করতে হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার।
স্থানীয় মো. শুক্কুর আলি জানান, তার ছেলে মেয়েরা কেউ বাড়ি থাকেনা তাদের জমি জমা নিয়ে একটা সমস্যা আছে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে কয়েক দফায় বসাও হয়েছে কোন সমাধান হয়নি। তাদের মায়ের সুচিকিৎসা অতিব জরুরি কিন্তু তার ছেলে মেয়েরা কেউ কর্ণপাত করেনা। সাফিয়া বেগম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ব্লাডের প্রয়োজন হয় তখন আমি তিন ব্যাগ ব্লাডের ব্যবস্থা করে দেই। আসলে বিষয়টি অমানবিক ও দুঃখজনক। এই ধরনের ঘটনা আমাদের স্বরূপকাঠিতে এই প্রথম।
অত্রএলাকা আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার জানান, মায়ের প্রতি সন্তানের এরকম আচরণ এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এটা অমানবিক দুঃখজনক আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি তারা যদি অসুস্থ মায়ের দেখাশুনা না করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy