প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২০ বছরে বজ্রপাত বর্তমান সময়ের তুলনায় ৫০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও একদিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে আসা গরম ও আর্দ্র বাতাস। অন্যদিকে উত্তরের হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক ও ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
গত ২৭ জুলাই বগুড়ায় নন্দীগ্রামে বজ্রপাতে প্রাণ গেছে বাবা ও ছেলের। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কৃষক আবদুস সামাদ পাওয়ার টিলার দিয়ে গ্রামের পাশে সরিষাবাদ মাঠে ধানের জমি চাষ করছিলেন। মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় এ সময় তার ছেলে হাবিব তার বাবাকে সহযোগিতা করছিল। ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। বজ্রপাতের কারণে গত ১১ বছরে প্রায় ২ হাজার ৬৪৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার একশ ভাগের চার ভাগ মারা যায় বাংলাদেশে। এ হিসাবে দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে প্রায় ২৪০ জন মানুষ মারা যায়। এ ছাড়াও বজ্রপাতের ফলে বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুসহ অন্যান্য প্রাণীও মারা যায়।
প্রতিবেদনে বজ্রপাতের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঝড়বৃষ্টির সময় মেঘের জলীয়বাষ্পের কণাগুলো বৈদ্যুতিক চার্জ সম্পন্ন হওয়ায় মেঘে স্থির বিদ্যুৎ সঞ্চিত হয়। এই বিদ্যুৎ সঞ্চিত হয়ে বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মতো কাজ করে। এই মেঘের ওপরের অংশে থাকে ধনাত্মক চার্জ ও নিচের অংশ থাকে ঋণাত্মক চার্জ। মেঘের দুই স্তরে এই চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। বাতাসকে বিদ্যুৎ পরিবাহী করে তোলে। আর এক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ তৈরি হয়। এর ফলে বজ্রপাত ঘটে।
জানা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতে বছরে প্রায় ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার মানুষ মারা যায়। আর প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আহত হয়। বজ্রপাতে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এ ছাড়াও পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ বার বজ্রপাত হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিগত ১১ বছরে জাপানে বজ্র্রপাতে ৩৫ জন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২২০ জন মারা গেছে। একই সময়ে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৬৪৪ জন। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতে বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার প্রতি কোটিতে একজন। আর বাংলাদেশে প্রায় ১৮ জন। নেপালে ২৪ জন। শ্রীলঙ্কায় ২৭ জন।
সম্প্রতি দেশে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট; রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর; ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ; ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও নেত্রকোনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের হাওরাঞ্চলেও বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ৪ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে বজ্রপাতে সর্বোচ্চ ৩৫৯ জন মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২০৭ জনের। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, জুন ও জুলাই মাসে ভারী বর্ষণ ও বন্যার প্রকোপের সময় বেশি বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে।
Editor : Md.Moslauddin (Bahar) Cell: 01919802081 Dhaka Office :: Manni Tower, Road 09,House : 1258 Mirpur Dhaka. Cell:01747430235 email : manobsomoynews@gmail.com Chattogram office :: Lusai Bhaban,( 2nd Floor) Cheragi Pahar Circle, Chattogram. Cell: 01919802081
© All rights reserved manobsomoy